নিয়মিত ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে প্রায় ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৮৩ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্র রাজনীতি চান না। এর বিকল্প হিসেবে ৮১ দশমিক ৯০ শিক্ষার্থী নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন এর পক্ষে মত দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংস্থার এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ ও জরিপ টিমের সদস্যরা।
জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করছে একদল শিক্ষার্থী। বিষয়টিতে শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ মতামত জানতে গত ৩ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বিষয়ে একটি জরিপ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ। এই জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮টি বিভাগ ও ১০টি ইনস্টিটিউটের ১ম বর্ষ থেকে মাস্টার্সের সর্বমোট ২ হাজার ২৩৭ জন শিক্ষার্থী অংশ করেন।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, মতামত প্রদানকারী ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন। এরমধ্যে ৮৩ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতিকে একেবারেই নিষিদ্ধ চান। ছাত্র রাজনীতির সংস্কার চান ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায়ই প্রত্যাশা করেছেন মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতির কোনো গুরুত্ব নেই বলে মনে করেন। ১ শতাংশ দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের উপর খুবই ইতিবাচক প্রভাব ও ২ শতাংশ ইতিবাচক প্রভাব আছে বলে মনে করেন। তাছাড়া ১ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
এছাড়াও, দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিকল্প হিসেবে ৮১ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন এর পক্ষে মত দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও দলীয় ছাত্ররাজনীতির প্রশ্নে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী শুধু ছাত্রসংসদ চান, তবে দলীয় ছাত্ররাজনীতি চান না বলে মতামত দিয়েছেন। ক্যাম্পাসভিত্তিক বা হলভিত্তিক দলীয় ছাত্ররাজনীতির কমিটি প্রদানকে ৯৪% শিক্ষার্থী সমর্থন করেন না। ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতির সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং সমর্থন করেন না। ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমের কারণে তাদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া এই জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হবেন না বলে মতামত দিয়েছেন। ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা নেই (জরিপে অংশগ্রহণকালীন সময়ে) বলে জানিয়েছেন। যেসকল শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি প্রত্যাশা করেন তারা এর কারণ হিসেবে ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতৃত্ব নির্মাণ এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি প্রকৃত অর্থেই জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি করতে সক্ষম নয় বলে মনে করেন ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী।
ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে অবস্থানের কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা পূর্বের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা (গণরুম ও গেস্টরুম, টর্চার সেল জোরপূর্বক রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং এ অংশগ্রহণ করানো ইত্যাদি) উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও দলীয় ছাত্ররাজনীতির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়া শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি ইত্যাদি বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লিখিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাবি গবেষণা সংসদ।
ছাত্ররাজনীতি গবেষণা জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ৪টি বিষয়ে সুপারিশ করে ঢাবি গবেষণা সংসদ। এরমধ্যে রয়েছে- দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণ; ডাকসু পুনর্জীবিত ও সংস্কার; শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন কমিটি গঠন এবং শিক্ষা ও গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।