১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:২৯

‘হিন্দুরা কাকে ভোট দেয়’— বক্তব্যের সমালোচনার পর ব্যাখ্যা দিলেন সারজিস

সারজিস আলম  © ফাইল ছবি

শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর গত ৫ আগস্ট হামলার আশঙ্কায় সীমান্তে জড়ো হন ঠাকুরগাঁওয়ের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি মতবিনিময় সভায় কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। সেখানে সনাতনী সম্প্রদায়ের ভোট নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। সারজিসের সেই বক্তব্য নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। বিষয়টি বুঝতে পেরে নিজ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন সারজিস। 

ভিডিও বার্তায় সারজিস বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে হিন্দু-মুসলিমের ভোটের রেশিও ৪৫:৫৫ শতাংশ। ছোটবেলায় আমি যাদের সঙ্গে স্কুলে গিয়েছি, খেলাধুলা করেছি। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর তারা যখন হামলার আশঙ্কায় সীমান্তের দিকে যায়; তখন এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। কেন তাদের ধর্ম দিয়ে বিচার করতে হবে? তারা বাংলাদেশের নাগরিক। এ দেশের নাগরিক হয়েও কেন তারা বর্ডারের দিকে যাবে? সেই জায়গা থেকে আমি বলেছিলাম, এ দায়টি একদিক দিয়ে আপনাদের উপরও যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমার ওই নির্দিষ্ট এরিয়ার জন্য (ঠাকুরগাঁও এবং আমার ইউনিয়ন) যদি ভোট করা হয়, তাহলে হিন্দুদের ভোট নৌকায় যাবে। ৮০-৯০ শতাংশ লোকের মাথায় এটা গেঁথে গেছে। আমি আমার কথার মাধ্যমে এটাই বোঝাতে চেয়েছি যে, এই যে মানুষের মাথায় একটা চিন্তা সেট হয়ে গেছে, এর ফলে আমার হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের তাদের যে অধিকার পাওয়ার কথা; সেটি থেকে বঞ্চিত করছে। কারণ আওয়ামী লীগ মনে করে ওই এলাকার জন্য তাদের ভোট ব্যাংক ফিক্সড।’

সারজিস বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর যে হামলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার সুষ্ঠু এবং সঠিক বিচার হয়নি। আমি বোঝাতে চেয়েছি, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের কোথাও ফিক্সড হওয়ার দরকার নেই। যে আপনার কথা শুনবে, আপনার কথা বলবে, বিপদে আপনার পাশে থাকবে তাকে ভোট দেবেন। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দল দেখার প্রয়োজন নেই, কোনো মার্কা দেখার প্রয়োজন নেই।’ 

ভিডিওর শেষে সারজিস বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট আমার ইউনিয়নের একজন বন্ধু আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, তাদের বাসায় কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হতে পারে। তখন হিন্দুদের যেন রক্ষা করা হয়, সেটি জানিয়ে প্রথম ভিডিও বার্তা দিয়েছিলাম আমি। পরবর্তীতে রাজধানীসহ সব জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে যেন রক্ষা করা হয় এবং তারা যেন তাদের অধিকারটুকু পায় সেটি নিশ্চিতে কথা বলেছিলাম। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে আমি যে বক্তব্য দিয়েছি, সেটি যদি আমার সীমাবদ্ধতার জায়গা থেকে বোঝাতে না পারি তাহলে এর জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’

সারজিস আলমের এই ভিডিও বার্তা ইতোমধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ দেখেন। ভিডিওতে মন্তব্য করেছেন দুই হাজার ৩০০ এর বেশি মানুষ। সেখানে জুমন দাস লিখেছেন, ‘নেতা হয়েছেন দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন, কথাবার্তায় মার্জিত হবেন। ক্ষমা চাওয়া অবশ্যই মহানুভবতা। কিন্তু একটি কথা আপনি বলছেন, ঠাকুরগাঁও এর হিন্দুদের বলেছি, কেন ঠাকুরগাঁও এর হিন্দুদের এটা বলবেন কেন? রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে একজন হিন্দু মানুষ আওয়ামী লীগ-কে ভোট দিবে না জামায়াত শিবিরকে ভোট দিবে এটা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। দয়া করে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াবেন না,কারো বাকস্বাধীনতা হরণ করবেন না।’

প্রান্ত রায় লিখেছেন, ‘প্রত্যেকটা হিন্দু মানুষের অন্তরের কথা বলেছেন ভাই। হিন্দুদের নিয়ে আপনাকেই একমাত্র দেখলাম কথা বলতে। কেউই এভাবে কথা বলতে দেখিনি। হিন্দুদের প্রত্যাশিত আট দফা বাস্তবায়ন করা হোক ভাই এটাই দাবি।’

প্রসঙ্গত, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সারজিস আলম বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তাহলে নতুন স্বাধীনতার পর কেন হিন্দু মানুষদের সীমান্তের দিকে ছুটে যেতে হবে? এই দুর্বলতা আপনারা নিজেরাই তৈরি করেছেন। না বুঝে, না জেনে সারা জীবনের জন্য আপনার ভোট একটি মার্কার জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। নৌকা মার্কার জন্য আপনার ভোট নির্ধারণ করে রাখাই হচ্ছে আপনার দুর্বলতা।’ 

সারজিসের এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সমালোচনার সৃষ্টি হওয়ায় আজ ভিডিও বার্তায় বিষয়টি পরিষ্কার করলেন তিনি।