নির্বাচিত সরকার পেতে হলে ‘দুটি’ কাজ করতে হবে : সারজিস
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গঠন করতে হলে আমাদের দুটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, আমাদের ধৈর্য ধারণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক আদর্শ, দলাদলি, মুখোমুখি হওয়ার ট্রেডিশন ও কালচার থেকে কিছু সময়ের জন্য বিরত থেকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার সাথে মতবিনিময় সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, আমাদের ছাত্র-জনতাকে মনে রাখতে হবে আমরা কোনো অথরিটি না। আমরা প্রেসার গ্রুপ। দেশ সংস্কারে আমরা যেসব কাজ করবো, তা যেন আইন মেনে করি। আইনের বাইরে গিয়ে আমাদের কোনো কাজ করার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সব জায়গায় অংশগ্রহণ থাকবে। কিন্তু পড়াশোনা করতে হবে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ বাংলাদেশে কাজ করে প্রতি মাসে লক্ষ কোটি ডলার বেতন হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে। সেইসব পদের জন্য আমাদের নিজেদের তৈরি করতে হবে।
সারজিস আলম বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন চলেছে। বিগত সময় অনেক দল হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সফল হয়নি। সাধারণ মানুষ হাসিনা সরকারের কাছে জিম্মি হয়েছিল। তাই দ্বিতীয় স্বাধীনতার জন্য মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আবু সাঈদ তার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বলেই আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। এভাবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, হাসিনা ও তার কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তার দোসররা এখনো দেশে আছে। তারা আমাদের মাঝে বিভেদ তৈরি করবে। তাই যতদিন পর্যন্ত না দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার আসছে, ততদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।
রংপুর বিভাগের সাথে বৈষম্য নিয়ে তিনি বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা ঝুলে রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এক হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন ছিল। অথচ পদ্মা সেতু ও রেল সেতু তৈরির জন্য হাসিনা সরকার ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। তিস্তাপাড়ের কোটি মানুষের জন্য ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা করতে পারেনি। দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেই বরাদ্দ পুরো রংপুর বিভাগে দেওয়া হয়নি। আমরা বৈষম্যমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই।
কেন্দ্রীয় নেতাদের আলোচনা শেষে ছাত্র-জনতার নানা প্রশ্নের উত্তর দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, জাতীয় সংগীত ও জুলাই-আগস্টের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় রংপুরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ও নানা শ্রেণি পেশার সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন।