পুলিশের ছোড়া ককটেল বিষ্ফোরনে হাত হারালেন নুর হোসেন
ছাত্র জনতার আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া ককটেল বোমায় হাতের কবজি হারান ভ্যান চালক নুর হোসেন। ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে ছোড়া ককটেল সরিয়ে দিতে হাতে নেওয়ায় ঘটে এমন বিস্ফোরণ। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। হাত হারিয়ে দিশেহারা নুর হোসেন ও তার পরিবার।
চিকিৎসার অভাবে গ্রামের বাড়িতে পড়ে থাকা নুর হোসেন গত তিন বছর আগে ঢাকায় গিয়ে জুরাইন পাটের ভ্যাগ এলাকায় ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার হত তা দিয়ে স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ের সংসার চালাতেন তিনি। স্বপ্ন ছিল টাকা রোজগার করে বাড়িতে এসে বিবাহ দেবেন ১৮ বছর বয়সি বড় মেয়ে মিতুকে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এক মুহূর্তেই সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।
তিনি জানান, গত ৫ আগস্ট সোমবার প্রতিদিনের মতই ভ্যান নিয়ে বের হয়েছিলো নুর হোসেন। তখন দুপুর দেড়টায় যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আসতেই ছাত্র জনতা ও পুলিশের গোলাগুলি শুরু হয়। কান্না জড়িত কণ্ঠে নূর হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগের আগ মুহূর্তেও থেমে থাকেনি পুলিশ। একের পর এক গুলি ও ককটেল বোমায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া শত শত ছাত্র জনতাকে আঘাত করেছে তারা।
আহত নুর হোসেন বলেন, চোখের সামনেই একাধিক ছাত্র ভাইয়ের লাশ দেখেছি। এসময় ছাত্র জনতার আহ্বানে গণ আন্দোলনে জড়িত হই আমিও।
সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুর দেড়টায় যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আসতেই গোলাগুলির একপর্যায়ে পুলিশের ছোড়া ককটেল এসে আমার দুই রানে পরলে আমি বাম হাত দিয়ে ওই ককটেল সরানোর চেষ্টা করি এসময় অসাবধানতা বসত ককটেলটির বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বাম হাত ও দুই রানসহ আমার সঙ্গে থাকা আরো কয়েকজন বিধ্বস্ত হয়।
এসময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া অপর ভ্যান চালকরা আমাকে উদ্ধার করে যমুনা জেনারেলের হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাতের কব্জি ৯৫ শতাংশ বিকল হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক কব্জি কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। নিরুপায় হয়ে চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে হাতের কবজি কেটে ফেলতে বাধ্য হই।
আরও পড়ুন: আখতার-নাহিদ-আসিফের ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র সকল কার্যক্রম স্থগিত
তিনি আরোও বলেন, প্রায় একমাস ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা চালাতে পারছিনা এদিকে মেয়ে বড় হয়েছে। আশা ছিল ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে বড় মেয়ে মিতুকে আক্তার (১৮) বিবাহ দিবো, আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। সারা জীবনের জমানো সব কিছুসহ দারদেনা করে এক লাখ ৬০হাজার টাকার চিকিৎসা করেছি। এখনও অনেক টাকার প্রয়োজন তাই বর্তমান সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
আহত নুর হোসেনের স্বজনরা জানান, এখনও তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন কিন্তু পরিবারের পক্ষে তার চিকিৎসা চালানো অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। এজন্য সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নওরিন হক জানান, ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের তালিকা করে ইতি মধ্যেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ওই আন্দোলনে আরও কেউ আহত বা নিহত থাকলে আমাদের জানালে তাদের তালিকা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এবং জেলা প্রশাসক তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন।