বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের
বিগত ৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর থেকে তা দমাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল তৎকালীন আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকার। নানা কৌশল ও দমনপীড়নের পরও দমানো যায়নি তারুণ্যের এ আন্দোলন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং ব্যাপক হারে শিক্ষার্থী নিহত হলে আরও জোরালো হয় এ আন্দোলন।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশে প্রচলিত কোটা প্রথার যৌক্তিক দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং বিভিন্ন সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক থাকলেও পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে দেশের সব শিক্ষার্থীদের মাঝে। এর মধ্যে বিগত ১৬ জুলাই দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এবং হল ছাড়ার নির্দেশের পর রাজপথের আন্দোলনে জোরালো ভুমিকায় আসেন দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সহায়তা করেছি। সেটি সরাসরি এবং গোপনে হয়েছে তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায়। এখন পরিস্থিতি বদলেছে বলে আমরা তা প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছি—অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া, উপাচার্য, ইউআইইউ।
এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন জোরদার হলে শুরু হয় সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়ন এবং ক্র্যাকডাউন। ফলে সংকটে পড়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং সার্বিক অবস্থা। এর মধ্যেও শোষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরমধ্যে অনন্য ভূমিকা ছিল দেশের অন্যতম বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীদের।
আন্দোলনের শুরু থেকে সরকারের পতন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন শৃঙ্খলা এবং অন্যান্য কার্য অগ্রণী ভূমিকা ছিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের। আন্দোলনের শুরুতে ইউআইইউর শিক্ষার্থীরা রাজধানীর প্রগতি সরনীর নতুন বাজার এলাকা অবরোধ করে আন্দোলন করতে থাকে। এরপর তাদের সাথে আরও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হন। এছাড়াও ইউআইইউর শিক্ষার্থীরা রামপুরা-বাড্ডাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক এ আন্দোলনে যোগ দিয়ে নিহত হন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থী ইরফান ভূঁইয়া। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রবাড়ি এলাকায় পুলিশের গুলিতে তিনি মারা যান। এছাড়াও এ আন্দোলনে আহত হয় ইউআইইউ’র ৪০ জন শিক্ষার্থী। আর বিভিন্ন মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ইউআইইউর ১৭ জন শিক্ষার্থী।
আন্দোলনের শুরু থেকে সরকার পতন পর্যন্ত ইউআইইউর শিক্ষার্থী এমন নানা ভীতিকর অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেলেও তারা পিছু হটেননি। এর বাইরে আন্দোলনে সামনের সারিতে সমান সমান ভূমিকা রাখা ইউআইইউর নারী শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন ধরনের হয়রানি এবং সংকটে পড়েন। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বাসায় অবরুদ্ধ করা এবং হামলার ঘটনাও ঘটে।
আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানি গবেষণার বাতিঘর ইউআইইউ’র সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ
এতসব ঘটনার মধ্যে শিক্ষার্থীরা রাজপথে তাদের সাহসী ভূমিকা অব্যাহত রাখে। তারা রাজরোষ উপেক্ষা করে চালিয়ে যেতে থাকেন ছাত্র-জনতার এ গণবিপ্লব। আর শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে তাদের নিরাপত্তাসহ আর্থিক, প্রশাসনিক এবং আইনি সেবাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান অব্যাহত রাখে ইউআইইউ কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে—আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য মেডিকেল সেন্টারে বিশেষ সেবা, গুরুতর আহতদের বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা, মামলাসহ আইনি বিষয়ে সহায়তার জন্য আইনজীবী নিয়োগ, আটকে পড়া নারী শিক্ষার্থীদের উদ্ধার এবং নিরাপত্তা প্রদান, আর্থিক সহায়তা অন্যতম ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে।
এছাড়াও ইউআইইউ’র শিক্ষার্থীরা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে পথের শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজে নেমে পড়েন রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। তাদের হাতের ইশারায় নিয়ন্ত্রিত হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের গাড়ির চাকা। এর বাইরে শিক্ষার্থীরা জুলাই বিপ্লবকে জীবন্ত করতে কাজ করেছেন বিভিন্ন স্থানে দেয়াল লিখনও গ্রাফিতি অংকনেও।
সেখানেও রংতুলির সহায়তা কিংবা আর্থিক বিনিয়োগে পিছপা হয়নি ইউআইইউ কর্তৃপক্ষ। উচ্চশিক্ষালয় শিক্ষার্থীরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে। আর তাদের পেছন থেকে সব ধরনের সহায়তা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জানতে কথা হয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া’র সাথে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সহায়তা করেছি। সেটি সরাসরি এবং গোপনে হয়েছে তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায়। এখন পরিস্থিতি বদলেছে বলে আমরা তা প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছি।
আমরা চেষ্টা করেছি, আমাদের কোনো শিক্ষার্থী যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্ত না হন—সেটি নিশ্চিত করতে। সেজন্য আমাদের শিক্ষক এবং কর্মকর্তারা কাজ করেছেন। আমাদের পক্ষে যা সম্ভব ছিল, তার সবই আমরা করেছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক যেকোনো দাবি বা আন্দোলনে আগামীদিনেও এভাবে সহায়তা অব্যাহত থাকবে—যুক্ত করেন অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া।