৩ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের
তিনদিনের মধ্যে দাবি আদায়ের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা।
প্রতিনিধিরা জানান, আজ (মঙ্গলবার) দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন’-এর শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া’র সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসনসহ ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছেন।
এসময় প্রতিনিধিরা লিখিত বক্তব্যে তাদের দাবি এবং আলোচনায় দাবির প্রেক্ষিতে উপদেষ্টাদের মন্তব্য উল্লেখ করেন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তাদের প্রথম দাবি সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাদের ২য় দাবি হলো, অনতিবিলম্বে "সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন" প্রণয়ন করতে হবে। এই দাবি সম্পর্কে উপদেষ্টাবৃন্দ বলেন, আইন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য খুব দ্রুত নির্দেশ দেওয়া হবে।
তাদের ৩য় দাবি, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। এই বিষয়ে উপদেষ্টাবৃন্দ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ গঠন হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে যাতে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়, এর জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হবে।
৪র্থ দাবি হলো, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে "হিন্দু ফাউন্ডেশন" এ উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। এ দাবি সম্পর্কে উপদেষ্টামন্ডলী বলেন, এই বিষয়ে কীভাবে কাজ করা হবে ওনারা খুব দ্রুত আবার আমাদের সাথে আলোচনায় রসবেন।
৫ম দাবি, "দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন" প্রণয়ন এবং "অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন" যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে তারা বলেন, ইতিমধ্যেই আইনটি প্রক্রিয়াধীন কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই আইনটি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৬ষষ্ঠ দাবি, সরকারি/ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করতে হবে।
এই দাবি নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিয়োগ হওয়ার পরপরই এই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
৭ম দাবি, "সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড" আধুনিকায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে উপদেষ্টাবৃন্দ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিয়োগ হওয়ার পরপরই এই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এবং তাদের ৮ম দাবি ছিলো, শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান করতে হবে।
এ বিষয়ে উপদেষ্টাবৃন্দ বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় ৩ দিনের ছুটি বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। সেই সাথে প্রত্যেক সংখ্যালঘুর প্রধান ধর্মীয় উৎসবের তালিকা করে ছুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এছাড়াও লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন যে, অন্যান্য দাবীসমূহ বাস্তবায়নের জন্য অনতিবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যেহেতু আমাদের কাছে তারা সময় চেয়েছেন তাই আগামী ৩ দিন (১৪-১৬ আগস্ট) "সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন”-এর সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন কর্মসূচি থাকছে না।
সম্মেলনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি সুস্মিতা কর বলেন, যদি ১৬ আগস্টের মধ্যে দাবীসমূহ বাস্তবায়নের জন্য কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে "সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন" এর পক্ষ থেকে পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্দোলন বিষয়ক পরবর্তী ঘোষণা দেওয়া হবে।