১০ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৯

ঢামেকের আইসিউতে চিকিৎসাধীন রাকিবের সন্ধান পেয়েছে পরিবার

রাকিব হোসাইন  © টিডিসি ফটো

গত ০১ আগস্ট দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে প্রকাশিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বার্ণ ইউনিট চিকিৎসারত নাম পরিচয়হীন ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছে পরিবার। জানা যায়, ওই ব্যক্তির নাম রাকিব হোসাইন। ওয়ার্কশপে কাজ করা রাকিবের বয়স ২৪ থেকে ২৫ বছর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শণির আখড়া এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় বুলেটবিদ্ধ হন তিনি। 

গতকাল (৯ আগস্ট) ঢামেকের বার্ন ইউনিট পরিদর্শন করে দেখা যায়, জ্ঞান ফিরেছে তবে রাকিব এখনও কথা বলতে পারেন না। পরিচিতজনদের দেখলে নীরবে কান্না করেন তিনি। ডিউটি চিকিৎসক জানান, রাকিবের কথা বলতে আরও সময় লাগতে পারে। কিন্তু তার আঘাত গুরুতর। এখনও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাত-পা নাড়তে পারেন না তিনি।

এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গত ১৮ কিংবা ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের বর্বর হামলার পর গুরুতর আহত অবস্থায় কে বা কারা নিয়ে এসেছেন রাকিবকে। 

গত ০১ আগস্ট বার্ণ ইউনিট ঘুরে দেখা যায়, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের আইসিইউতে ৩ নাম্বার ওয়ার্ডে ৭ নাম্বার বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন রাকিব। তার বাম চোখে গুলি লেগে চোখটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও মাথার সামনে থেকে পেছন পর্যন্ত সেলাই করা রয়েছে। 

কুমিল্লার মুরাদনগর জেলার বাসিন্দা রাকিবের মা মেরি বেগম জানান, ‘ছোটবেলায় ছেলেটাকে রেখে তার বাবা কোথাও চলে যায়। প্রথমে যেদিন খুঁজে না পেয়ে ভেবেছলাম হয়ত মারা গিয়েছে। পরে আপনাদের সকলের সহায়তায় ছেলেকে খুঁজে পাই। এই মুহূর্তে আমি অনেক বেশি অসহায়। একমাত্র ছেলের উপার্জনে আমার পেট চলত। কিন্তু সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে। আমার এই অসহায়ত্বের শেষ কবে জানি না। তার চিকিৎসা চালানোর মতো অবস্থাও আমার নাই।’ 

রাকিবের মা মেরি বেগম আরও জানান, গত ২ মাস আগে শখ করে ছেলেকে বিয়ে করান। কিন্তু ছেলের এই অবস্থায় পুত্রবধূকে রাখার বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে গেছে। মেরি বেগম যোগ করেন, ‘আমার ছেলের জীবনটা শেষ হয়ে গেছে বাবা।’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ-সংঘাতে নিহতদের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি। বিভিন্ন হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও আত্মীয়-স্বজন থেকে পাওয়া সূত্রে অনুযায়ী এ পর্যন্ত দেশজুড়ে প্রায় ৬ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনও বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। হারিয়েছেন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। সব থেকে বেশি হতাহতের খবর পাওয়া যায় ১৭ থেকে ২১ জুলাইয়ে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে আন্দোলনে হতাহতদের বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত এবং স্বল্প আয়ের মানুষ। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ভর্তিকৃত অসংখ্য হতাহত এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন।