অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের শপথ আজ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে তাকে বহনকারী বিমানটি ঢাকায় ল্যান্ড করার কথা রয়েছে। ফলে ড. ইউনূসের দেশে ফেরার সময় বিবেচনায় রেখে আজ রাত আটটায় বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
বুধবার (৭ আগস্ট) সেনাসদরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, আগামীকাল শপথ অনুষ্ঠানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। একটা প্রস্তাব ছিল বিকেলে করার। সেটি অত্যন্ত টাইট শিডিউল হয়ে যায়। কারণ, ড. মোহাম্মদ ইউনূস ২টা ১০ মিনিটের দিকে দেশে আসবেন। এর পরপরই আয়োজন করা কঠিন। এ জন্য রাত ৮টার দিকে আয়োজন করতে পারি। মোট ৪০০ জন লোকের আয়োজন থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য ১৫ জনের মতো হতে পারে। তারপরও দুই-একজন যোগ হতে পারে।
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ তার নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করতে যাওয়া সরকারের অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বঙ্গভবন কর্তৃপক্ষ।
ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গতকাল বিকালে সেনা সদরে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘তাকে আমরা রিসিভ করার জন্য বিমানবন্দরে যাব। তিনি আমাদের কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমরা সবাই মিলে তাকে সাহায্য করব।’
এদিকে, শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর আলোচনা শুরু হয়েছে সরকারের বাকী সদস্যদের নিয়ে। গতকাল রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ সংশ্লিষ্টদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাকি সদস্যদের নাম চূড়ান্ত হবে বলেও একই বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানান—বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাকি সদস্যদের নাম চূড়ান্ত হবে।
সূত্রের তথ্য, বিশেষ এ সরকারের বাকী সদস্যদের তালিকায় উপদেষ্টা হিসেবে 'শর্ট লিস্টেড' হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন—বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সিএসপি। এছাড়াও তালিকায় রাখা হয়েছে সাবেক সেনাকর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, বিটিআরসি’র সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মনজুর-উল-আলমকে।
এর বাইরে—সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, আইন বিশেষজ্ঞ বিচারপতি (অব.) রেফায়েত আহমেদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এ কে এম জাহাঙ্গীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ্ খান রয়েছেন উপদেষ্টাদের তালিকায়।
আরও পড়ুন: ১৫ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, ‘শর্ট লিস্টে’ ২৪ জন
মানবাধিকারকর্মী আদিুলর রহমান খান, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, সাবেক তথ্য সচিব এ টি এম ফজলুল করিম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ব্ল্যাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আশিষ কুমার পাল, বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও বেলা’র প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, কানাডার ম্যাকগ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীও রয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার তালিকায়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ তালিকায় আরও রয়েছেন—ইএনটি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান এবং অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং লে. জেনারেল (অব.) মাহফুজুর রহমান।