রিকশা চালক গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ গাড়িতে উঠাতে গিয়ে দেখে তারই আদরের সন্তান
ওবায়দুল ইসলাম একজন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক। যাত্রাবাড়ির কাজলা এলাকায় রিকশা চালানোর সময় কয়েকজন মিলে গুলিবিদ্ধ এক কিশোরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করে। রিকশা থেকে নেমে গুলিবিদ্ধ কিশোরকে রিকশায় তুলতে গিয়ে দেখে এ আর কেউ নন তার আদরের সন্তান আমিনুল ইসলাম (আমিন)।
এ ঘটনা গত ২১ জুলাইয়ের। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সেদিন ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ চলছিল।
গতকাল বুধবার দুপুরে যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ দনিয়ায় এক কক্ষের বাসায় বসে ওবায়দুল ইসলাম বলছিলেন, ‘কাছে গিয়া চাইয়্যা দেখি, এ তো আমারই ছেলে। ছেলেকে দেখে বাবাগো, সোনাগো বলে অজ্ঞানের মতো হয়ে যাই। পরে আরেক সিএনজি করে ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়া যাই। পাঁচ মিনিট পরেই ডাক্তার জানায়, আমার ছেলে আর নাই। এর আগে প্রথমে ছেলের মারে ফোনে জানাই, ছেলে গুলি খাইছে। পরে আবার জানাই, ছেলে মইরা গেছে।’
ওই দিনের ঘটনা উল্লেখ করে আমিনের মা সেলিনা বেগম বলেন, তাঁর ছেলের বয়স হয়েছিল ১৬ বছর। ছোটবেলায় মাদ্রাসায় পড়ত। পরে পড়া বন্ধ করে কাজে যোগ দিয়েছিল। স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করত। ২১ জুলাই ভালো লাগছে না বলে কাজে যায়নি সে। সারা দিন ঘুমিয়ে ছিল। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ভাত খায়। মায়ের কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিল। সেই ২০ টাকা তার পকেটেই ছিল।
ছেলেকে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে দাফন করে এই বাবা ও মা যাত্রাবাড়ীতে ফিরেছেন। তবে ওবায়দুল ইসলাম এখনো কাজ শুরু করতে পারেননি। সেলিনা বেগম জানালেন, ছেলে মারা যাওয়ার পর মুঠোফোনে তোলা তার কয়েকটি ছবি প্রিন্ট করে এনেছেন। বললেন, ‘ছেলের মুখ তো আর দেখতে পারুম না। তাই ছবিগুলা ওয়াশ করে আনছি। কালা গেঞ্জি পরা যেকোনো ছেলেরে দেখলে মনে হয়, এ আমার ছেলে। আমার যে কী জ্বালা, তা খালি আমি বুঝি।’