৬ সমন্বয়কের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান, আন্দোলনে নামছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর গোয়েন্দা পুলিশের ‘হেফাজতে’ থাকা অবস্থায় কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীদের ৬ সমন্বয়কের আন্দোলন স্থগিতের বিষয়ে দেওয়া বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছেন অন্য সমন্বয়করা। তারা বলছেন, জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে এই বক্তব্য দেওয়ানো হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ও ৯ দফা দাবি আদায়ে আজ সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে নিজেদের লিখিত সমর্থনের কথা জানিয়েছেন অন্তত ৪৫-৫০টি সরকারি-বেসরকারি, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২৮ জুলাই) রাত থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। এসব বিবৃতিতে শিক্ষার্থী নির্বিচারে আটক, গুম এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেনস্থার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমাদের অনেক নিরপরাধ ভাই-বোন শহীদ হয়েছেন। এ আন্দোলনের জের ধরেই অনেককে ধরপাকড়, গুম এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। আমরা সরকারের এহেন কার্যক্রমে তীব্র নিন্দা প্রদর্শন করছি এবং ডিবি কর্তৃক জোরপূর্বক প্রদত্ত ৬ সমন্বয়কের বিবৃতিকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।
আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলনে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষতি ৩২ কোটি টাকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের জোরপূর্বক ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং আটক অবস্থায় তাদের থেকে আদায়কৃত বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করছে। আমাদের ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে এবং অন্যান্য সমন্বয়কদের সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডিবি কার্যালয়ে আন্দোলনের সমন্বয়কদের ধারা বাধ্য করা বিবৃতি আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। এই জোরপূর্বক বিবৃতির কোনো বৈধতা নেই এবং আমরা আমাদের জাতীয় দায়িত্বের অংশ হিসেবে দেশের ছাত্রসমাজ এই আন্দোলনের পাশে আছি। আমাদের সকল দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
উচ্চ মাধ্যমিক বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থীদের বিবৃতিতে বলা হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় সমন্বয়কদের ডিবি পুলিশের জিম্মি অবস্থায় থেকে জোরপূর্বক চাপানো কর্মসূচি বাতিলের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করলাম। আন্দোলনে শহিদ হওয়া সকলের খুনের বিচার, আমাদের শিক্ষক মাহমুদুল হাসান স্যার সহ গ্রেফতারকৃত ও গুম হওয়া সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি, দায়িত্বশীলদের পদত্যাগ, ছাত্রলীগের খুনিদের বিচার এবং আমাদের বাকি সকল দাবি না মানা অবধি আন্দোলন চলমান থাকবে।
এর আগে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজত নেয়া হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুমকে। পরবর্তীতে সেখানে থেকেই সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক।
সমন্বয়করা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে আহত-নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ সব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাই। আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার, যা ইতোমধ্যে সরকার পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। সার্বিক স্বার্থে এই মুহূর্ত থেকে আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।
এরপর গতকাল রবিবার রাতেই সমন্বয়ক আব্দুল কাদের লিখিত এক বিবৃতিতে সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ। এতে বলা হয়, সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ও ছাত্রলীগের আক্রমনে নিহত শত শত শহীদের আত্মত্যাগ তিরস্কার করে ডিবি কার্যালয়ে বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে সমন্বয়কদের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দাবী আদায়ে আমরা অবিচল ছিলাম, রয়েছি এবং থাকবো।