হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণাকাতর বাবা, মেঝেতে ঘুমাচ্ছে শিশু সন্তান
শরীরে অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন। ডান হাত, ডান পা এবং ডান পাশের কোমরের কাছে গুলির গভীর ক্ষত। অসহ্য যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। বিছানার পাশেই নিচে মেঝেতে ঘুমাচ্ছে ১৮ মাস বয়সী শিশু সন্তান। স্বামীর করুণ অবস্থা দেখে স্ত্রী বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।
রবিবার (২৮ জুলাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের একটি ওয়ার্ডে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
গত শনিবার (২১ জুলাই) রাজধানীর ডেমরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন নাজিমুদ্দিন (২৪)। এরপর থেকে ঢামেকেই চিকিৎসা চলছে তার। জুতার কারখানায় কাজ করা নাজিমুদ্দিন শনিবার বিকালে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে চলা সংঘর্ষের মধ্যে পরে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
নাজিমুদ্দিনের স্ত্রী নিলুফার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গত বুধবার পারিবারিক কারণে শিশু সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। শনিবার বিকালে আমার স্বামী ফোন করে বলে, আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি হয়তো আর বাঁচবো না। আমার শরীরে অনেক গুলি লেগেছে। এই কথা শুনে আমি আতকে উঠেছিলাম। গাড়ি বন্ধ থাকায় তখন ঢাকায় আসতে পারিনি।’
নোয়াখালীর মাইজদির পূর্ব চরমাতুরায় বাড়ি নাজিমুদ্দিনের। ঢাকায় ডেমরার শানারপাড়া এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন। জুতার দোকানে কাজ করে যে আয় হয়, তা দিয়ে সুখে দিন পার করছিলেন। তবে গুলিবিদ্ধ হয়ে নাজিমুদ্দিন-নিলুফার দম্পতির জীবনে কালো মেঘ নেমে এসেছে।
নিলুফার জানান, ডান হাতের আঙুলে গুলি লাগায় তা কেটে ফেলতে হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কোমরের নিচে গুলি লাগায় গভীর গর্ত হয়ে গেছে। এই গর্ত গজ কাপড় দিয়ে বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। প্রতিদিনই ড্রেসিং করতে হচ্ছে। ডান পা’র কী হবে তাও বুঝতে পারছি না। এই অবস্থায় শিশু সন্তানকে নিয়ে কীভাবে বাকি জীবন পাড়ি দেব?
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিল না। এমনকি কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের সাথেও যুক্ত ছিল না। তাকে কেন গুলি করা হলো? আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।