আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থিত করার বাধ্যবাধকতা মানছে না সরকার: ছাত্রদল
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রিমান্ডের নামে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন, পাক-হানাদারদের মতো রাতের আঁধারে গণ-গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদ। আজ রবিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শতশত ছাত্রদল নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। গ্রেফতার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থিত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তুলে নিয়ে গুম করে রেখে, নির্যাতনের মাধ্যমে সরকারের বাহিনীগুলোর কর্মকর্তাদের ইচ্ছেমতো স্বীকারোক্তি আদায়ের অপচেষ্টার কয়েকদিন পর আটককৃত নেতাকর্মীদেরকে আদালতে তোলা হচ্ছে। এমনকি কয়েকজনের আটকের বিষয়টি এখনও স্বীকার করা হচ্ছে না।
“মধ্যরাতে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে ব্লক রেইডের নামে ছাত্রদল নেতাকর্মী এবং সাধারণ ছাত্রদের গণগ্রেফতার অভিযান চলছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘরে রাতের আঁধারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হানা দেওয়ার মতো বীভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর অতিউৎসাহী সদস্যরা। সেসময়কার রাজাকারদের মতো করে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদল নেতাকর্মী এবং সাধারণ ছাত্রদের বাড়ি-ঘর চিনিয়ে দিতে সাহায্য করছে।”
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গ্রেফতারকৃত ছাত্রদল নেতাকর্মীদেরকে রিমান্ডে নিয়ে থানা হেফাজতে নির্মম শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক সুরক্ষা এবং উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও সেগুলো মানার কোন বালাই নেই। সিলিংয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেধড়ক পেটানোর সাথে হাত-পায়ের নখ তুলে ফেলার মতো বীভৎস নির্যাতন চালানো হচ্ছে ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের ওপর। প্রতিদিন অসংখ্য নির্দোষ ছাত্রদল নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিএনপি বা ছাত্রদলের সাথে ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা পেলেই তাদেরকে আটক করা হচ্ছে।
গণগ্রেফতার এবং রিমান্ডে এ ধরনের পাশবিক নির্যাতন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং বাংলাদেশের সংবিধান ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলছে সংগঠনটির। সংগঠনের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির সবাইকে গণগ্রেফতার ও রিমান্ডে পাশবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। যারা এ ধরনের বর্বর নির্যাতনের সাথে জড়িত, ভবিষ্যতে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকার অধ্যায়ের ৩৩ (১) নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- গ্রেফতারকৃত কোনো ব্যক্তিকে যথাসম্ভব গ্রেফতারের কারণ জ্ঞাপন না করে প্রহরায় আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ ও তার আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না।
৩৩ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (গ্রেফতারের স্থান থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে) হাজির করতে হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাকে তদতিরিক্ত প্রহরায় আটক রাখা যাবে না