তিতুমীর কলেজের বন্ধ ছাত্রাবাসে হামলা-ভাঙচুর, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে ঘটেছে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা। হামলা-সহিংসতা থেকে বাদ যায়নি রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজও। এছাড়া এই এলাকার সেতু ভবন, বিআরটিএ কার্যালয় কিংবা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ— তাদের ধ্বংসের হাত থেকে বাদ যায়নি এমন গুরুত্ব স্থাপনা।
সরকারি তিতুমীর কলেজের আক্কাছুর রহমান আঁখি হল দুর্বৃত্তদের ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে হলের আনুমানিক চার শতাধিক শিক্ষার্থী। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় আক্কাছুর রহমান আঁখি হলে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীরা জানান, দুর্বৃত্তরা হলের বিভিন্ন কক্ষের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা শিক্ষার্থীদের পোশাক, কাথা, বালিশ, সার্টিফিকেট, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে নষ্ট করেছে। এছাড়াও হলের আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ভাঙচুর ও লুট করেছে।
আঁখি হলের ৩০৪ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী প্রান্ত হোসেন ফয়সাল। নতুন হলে ওঠার জন্য তিনি বাড়ি থেকে এনেছিলেন দশ হাজার টাকা। ১৮ জুলাই দুর্বৃত্তদের হামলায় সেই টাকা খুইয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু টাকা নয়, তাদের তাণ্ডব থেকে রেহায় পায়নি আমার ব্যবহৃত সাইকেলসহ কোনো কিছুই। হল বন্ধ থাকায় আপাতত বাড়িতে এসেছি’।
আঁখি হলে থাকতেন শিক্ষার্থী রিয়াদ মুন্সি। তিনি বলেন, ‘গায়ে পড়নের এক জোড়া পোশাক বাদে আর কিছুই এখন নেই। সেদিনের রাতের তাণ্ডবে হারিয়েছি নিজের একাডেমিক সার্টিফিকেটও। হল বন্ধ থাকায় বর্তমানে মহাখালীতে থাকছি।’
আরও পড়ুন: তিতুমীর কলেজের ভবনে ভবনে হামলা-ভাঙচুরের ক্ষতচিহ্ন, কোটি টাকার ক্ষতি
হলের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও একই সুরে জানান তাদের দুঃখের কথা। আঁখি হলের চারপাশ জুড়ে তাদের প্রায় ২০-৩০টি মোটরসাইকেলের বিচরণ ছিল। দুর্বৃত্তদের আগুনে ঝলসে গেছে তাদের সখের বাহন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আঁখি হলের ভেতরের দিক বর্তমানে ধ্বংসস্তূপ। হল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই চলে গেছেন নিজ বাড়িতে। যারা রাজধানীতে রয়ে গেছেন তারাও কষ্ট করে থাকছেন বন্ধু-বান্ধব কিংবা আশেপাশের মেস বাসা কিংবা হোস্টেলে।
এদিকে, ১০ জুলাইয়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কোটা আন্দোলনের কর্মসূচি শাহবাগে ছিল বলে জানান তিতুমীর কলেজ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের একাধিক শিক্ষার্থী। তারা জানান, তিতুমীরে কলেজে পড়াশোনা করে কলেজের সম্পদ নষ্ট করবে— এরা কখনও তিতুমীরের শিক্ষার্থী হতে পারে না।
শিক্ষার্থীরা ঠিক কবে নাগাদ আবার ছাত্রাবাসে উঠতে পারবে এই বিষয়ে আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রভাষক কাজী মোহাম্মদ আল-নূর বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও ধ্বংসপ্রাপ্ত হল ঠিক করতে সময় লাগবে। তারপর আমরা বলতে পারব কবে হোস্টেল চালু হবে।’
কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন আঁখি হলের বিষয়ে বলেন, আঁখি হলে এখন ওঠা যাবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের শেখ জামাল ছাত্রাবাসে ওঠাবো। কলেজ খুললেই শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে টাকা জমা নিয়ে নতুন হলে তাদের স্থানান্তর করব।
জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগম জানান, ‘আমাদের ডেডিকেটেড ইন্টারনেট সার্ভার লাইন ছিল সেটি দুর্বৃত্তরা ধ্বংস করেছে। সিসি ক্যামেরা, হার্ড ডিস্কসহ প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা একটি মামলা করেছি এবং আমাদের কলেজে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য আরও পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন মিয়া বলেন, `বন্ধ হলে আগুন লাগিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। এখন এই ক্ষতি পূরণের দায়িত্ব যদি সরকার নেয়, তাহলে হলের শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা হবে। আমরাও খুশি হবো, যদি সেই সহযোগিতা প্রদান করেন। ক্যাম্পাস বর্তমানে বন্ধ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, ক্যাম্পাস খুললে হলের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আমরা অধ্যক্ষের নিকট একটি আবেদন করব।'
সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক জুয়েল বলেন, `অধ্যক্ষকে জানিয়েছি যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরা সকলে এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এরকম জঘন্যতম ঘটনা যেন তিতুমীর কলেজকে নিয়ে কেউ আর করতে সাহস না পায়। আমরা আমাদের হলের শিক্ষার্থীদের পাশে সবসময় থাকব। আমরা তাদের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রাখছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকও পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন।'