কোটা আন্দোলনকে ঘিরে জেলায় জেলায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক
চলমান কোটাসংস্কাপন্থী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। এখন পর্যন্ত অন্তত দুই ডজন নেতাকর্মীর পদত্যাগের তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি হবে।
তাদের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে ১৪ জন, রাঙামাটিতে ৬ জন, মৌলভীবাজারে ২ জন, রাজশাহী ও শরীয়তপুরের একজন করে রয়েছেন। চলমান কোটাসংস্কাপন্থী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে সর্বশেষ কয়েকদিনে তারা পদত্যাগে ঘোষণা দেন।
কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া মেডিকেল কলে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়া সব নেতাই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। ১৬ সদস্যের কমিটি ১৪ জন স্বেচ্ছায় ফেসবুকে পোস্ট এবং অলিখিতভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে তারা সবাই লিখিতভাবে বিষয়টি জানাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন পদত্যাগ করা এক সাংগঠনিক সম্পাদক।
পদত্যাগের বিষয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল আবির বলেন, কমিটির বেশ কয়েকজন ফেসবুকে পদত্যাগের পোস্ট দিয়েছেন। সেটা তাদের ব্যাপার। কেন্দ্রীয় কমিটি সাথে তারা হয়তো কথা বলবেন। যেহেতু আমাদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তাই আমরা সবাই বাসায় অবস্থান করছি।
রাঙামাটি: পদত্যাগ করা ছাত্রলীগ নেতারা সবাই রাঙামাটি সরকারি মেডিকেল কলেজ শাখার। তারা হলেন— কমিটির যুগ্ম সম্পাদক প্রাঙ্গণ মল্লিক ও দীপ্ত দে, সাংগঠনিক সম্পাদক সৃজন দে, কমল ত্রিপুরা ও জিয়াদুল হক। কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হলে এতে একাত্মতা জানিয়ে কলেজটির সাধারণ শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। আর সেই আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগের বহিরাগত কর্মীরা। হামলায় আহত হন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্মসম্পাদক দীপ্ত দে। এ ঘটনায় ক্ষোভে ওই পাঁচ নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এছাড়া ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন একই কমিটির সহসভাপতি ক্যাচিংনু মারমা।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার): কুলাউড়া উপজেলায় পদত্যাগকারীরা হলেন— রাউৎগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি আসাদুর রহমান তারেক ও একই ইউনিয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ। সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে তারা সংগঠন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তারা বলেন, এরপর থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারী ও মাদার বক্স হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আল ফারাবী পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন যৌক্তিক ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যে সহিংস আচরণ দেখিয়েছে সেটি আমার ভালো লাগেনি। তাই পদত্যাগ করছি।
শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার সরদার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের হাতে মারধের শিকার হবেন কখনো ভাবিনি। তারা অধিকার চেয়েছিল, এটাই তাদের অপরাধ। শিক্ষার্ধীরে ওপর এভাবে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে যে ছাত্রলীগ হামলা করতে পারে, তারা আর কি না করতে পারে!