০৬ জুলাই ২০২৪, ২১:১৬

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে মুখে সম্মতি, ক্যাম্পাসে মারমুখী ছাত্রলীগ

  © টিডিসি ফটো

হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পহেলা জুলাই থেকে টানা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করছেন তারা। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আগামীকাল রবিবার (৭ জুলাই) থেকে সব ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি ‘বাংলা ব্লকেড’ এর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে পাশে পাচ্ছে না প্রায় সব ক্যাম্পাসে একক নিয়ন্ত্রণে থাকা ছাত্রলীগকে। উলটো একাধিক ক্যাম্পাসে এই আন্দোলন দমনে বাধা, শোডাউন ও হামলার অভিযোগ উঠছে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তাদের মৌন সম্মতি রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা বলছে, আমাদেরও অনেকে চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে এবং আগামীতে দেবে। সেখানে এ ধরনের কোটা প্রথা চালু থাকলে বৈষম্য সৃষ্টি করবে। যেহেতু বিষয়টি সরকার ও জাতীয়ভাবে সম্পৃক্ত তাই চুপ রয়েছেন নেতারা।

বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী ইনানেন সঙ্গে একাধিক বার চেষ্টা করা হলেও এ প্রতিবেদক তাদের কোনো বক্তব্য পাননি। তবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তারা বলছেন, এই আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগ থেকে সাংগঠনিকভাবে কোনো চাপ নেই। আবার প্রকাশ্যে সমর্থনও দেয়া যাবে না। 

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন রানা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই কোটা বাদ দিয়েছেন। এখন কোটা আন্দোলন হচ্ছে এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি। সম্প্রতি হাইকোর্টে রায়ে দিয়েছেন, যদিও এরপর শুনানি হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বাতিল করেছেন আমি আশা করি সামনের শুনানিতে এটা সংস্কার অথবা বাতিল থাকবে। ছাত্রলীগের সবাই চায় যে কোটা না থাকুক অথবা সংস্কার হোক। 

ছাত্রলীগ থেকে কোনো চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ থেকে কোনো চাপ নেই। চাপ থাকলে আপনারা দেখতে পেতেন। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন যেন অন্যরা (অন্য ছাত্রসংগঠন) ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা না নিতে পারে সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাবি শিক্ষার্থী সিয়াম রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী যেহেতু চাচ্ছে আমাদের অবস্থানও সেটা। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিরোধী নই।

আন্দোলনকারীদের ঢাবির সূর্য সেন হলে গেট আটকে বাধা দেওয়া হয়েছিল কেন, জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এ নেতা বলেন, আমরা সূর্যসেন হল ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছি। তাদের দাবি জানানোর স্বাধীনতা রয়েছে। সেদিন সূর্য সেন হলে যেটা ঘটেছে এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, আমাদের অনেক ভাই-বোনও বিসিএসসহ সরকারি বিভিন্ন চাকরিতে অংশ নিচ্ছেন ও চাকরিও পাচ্ছেন এবং সামনেও নেবেন। এখন কোটা বহাল থাকলে তারাও তো ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তাই এই আন্দোলন নির্বিশেষে সকল চাকরিপ্রত্যার্শীর। তাই এখন ছাত্রলীগকে আন্দোলন বিরোধী বলা যাবে না, ছাত্রলীগ কৌশল অবলম্বন করছে।

ঢাবির হলে হলে তালা দিয়ে কোটা কর্মসূচিতে বাধা ছাত্রলীগের, নেতাকে হলচ্যুতের চেষ্টা
গত ৪ জুন কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা যেন আন্দোলনে না যেতে পারেন, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক হলে তালা দিয়ে পাহারা বসিয়েছিরেন সংগঠনটির নেতারা। ঘটনার দিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হল, কবি জসীম উদ্‌দীন হল ও অমর একুশে হলসহ আরও বেশ কয়েকটি হলে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে পরবর্তীতে আন্দোলনরত অন্য শিক্ষার্থীরা হলে এসে তাদের নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে দেখা গেছে।

এদিকে, গত ৪ জুন গভীর রাতে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অমর একুশে হলের এক শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। গভীর রাতে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়টি কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ওই হলের সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলন শুরু করলে তাকে বাধ্য হয়ে হলে ফেরান হল প্রশাসন।  ওই শিক্ষার্থীর নাম সারজিস আলম। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম নেতা।

আন্দোলনরত ববি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
৪ জুন কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে চলা আন্দোলন বানচালের উদ্দেশ্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এমনকি ঘটনার ছবি তুলতে যাওয়া এক সাংবাদিককেও মারধর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ববির গেটের সামনে মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। মারধরে আহত ওই শিক্ষার্থীর নাম আরিফ হোসেন। পরে তিনি শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মাথায় আঘাত পাওয়ায় তার সিটিস্ক্যান করা হয়েছে।

কোটাকে আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসগুলো অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে: হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ
গত ৩ জুন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে দেশ ও  ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা ঠেকাতে মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শাখা ছাত্রলীগ। ওইদিন বেলা ১২টায় হাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর হোসাইন আকাশ ও সাধারণ সম্পাদক এম. এম. মাসুদ রানা মিঠু'র নেতৃত্বে ওই কর্মসূচি পালন করে হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক ভবন ও ডিভিএম গেইট হয়ে ক্যাম্পাস সংলগ্ন বাঁশেরহাট এলাকা প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে এসে মিছিল সমাপ্ত হয় এবং মিছিল শেষে অবস্থান কর্মসূচিতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন হাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। 

বক্তব্যে হাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আলমগীর হোসাইন আকাশ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের দিকে দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে একটি মহল কোটাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসগুলো অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কোটাকে কেন্দ্র করে যাতে কোন অপশক্তি শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি। তারই প্রেক্ষিতে আজকের এই মিছিল এবং মিছিল পরবর্তী সমাবেশ।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এম মাসুদ রানা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়েছেন সেই প্রত্যয়ে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্যই বিএনপি- জামায়াতের দোসরদের ইন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোটা পুনর্বহালের বিপক্ষে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। বিএনপি-জামায়াতের দোসরদের এই অরাজকতা রুখে দিতে হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ সব সময় মাঠে ছিল এবং থাকবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তরুণ প্রজন্মের জন্য সবসময় ভালো কিছু চিন্তা করেন। কোটার বিষয়ে তরুণ প্রজন্মের জন্য যেই সিদ্ধান্ত ভালো হবে উনি সেই সিদ্ধান্তই নিবেন। আর আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বিজ্ঞ আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।