০৩ জুন ২০২৪, ০০:৪৮

চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণপিটুনি খেলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, পুলিশে সোপর্দ

মেহেদী হাসান  © সংগৃহীত

চাঁদাবাজি করতে গিয়ে দোকানিদের গণপিটুনির শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক (বহিষ্কৃত) ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান এবং তার এক সহযোগী শহিদুল ইসলাম। রবিবার রাত ১১টার দিকে এসএম হলের পার্শ্ববর্তী পলাশী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। গণপিটুনির পর দোকানিরা তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেন।

মেহেদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন তিনি। বর্তমানে তারা দুজনই চকবাজার থানায় আটক আছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাঁদাবাজিতে বাঁধা দেওয়ায় চাপাতি দিয়ে নজরুল এবং মাহবুব নামের দুই ব্যবসায়ীকে মারতে গেলে দোকানিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী ও তার সহযোগীকে ধরে ফেলে এবং গণপিটুনি দেয়। পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে তাদেরকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে চকবাজার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

জানা যায়, নিয়ম করে প্রায় প্রতিদিন চাঁদাবাজি করতে ওই বাজারে যান সলিমুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা ও তার সহযোগী শহিদুল। এর আগে পলাশী বাজারের কলা বিক্রেতা দেলোয়ার থেকে এক হাজার টাকা এবং কনফেকশনারি দোকানের মালিক সানাউল্লাহ থেকে চাঁদা নেন তারা।

আরও পড়ুন: সাংবাদিক হেনস্তায় সাবেক ‘বহিষ্কৃত’ ছাত্রলীগ নেতাকে হল ছাড়ার নির্দেশ!

পলাশী দোকান মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক বলেন, রাত ১১টার দিকে এসে এই ছাত্রলীগ নেতা আমাদের দোকানীদের থেকে চাঁদা দাবি করে। তাকে বাঁধা দিলে সে নজরুল নামে এক ব্যবসায়ীকে মারধর করে এবং চাপাতি দিয়ে কোপাতে যায়। পরে সে পালিয়ে গেলে আমাকে চাপাতি দিয়ে মারতে আসে। আশেপাশে থাকা দোকানিরা আমাকে উদ্ধার করে এবং তাদের ধরে ফেলে। তারপর সবাই মিলে গণপিটুনি দেয়। পরে আমরা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে নিয়ে যায়।

আরেক ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বলেন, চাঁদা চাইতে আসলে আমরা তাকে বাঁধা দিই। তাতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথম আমাকে ঘুসি মারে এবং পরবর্তীতে চাপাতি নিয়ে আসে। তাদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। নিয়মিত অত্যাচার এবং চাঁদাবাজি করে তারা।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইকবাল মামুন বলেন, এটা প্রক্টোরিয়াল টিম দেখবে। সে এখন আমাদের ছাত্র নয়। কারণ তার ছাত্রত্ব নেই। হলে থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে অবৈধভাবে হলে থাকে। আমরা তাকে আগে চিহ্নিত করতে পারলে আগেই হল থেকে বের করে দিতাম। এখন একজন সাবেক ছাত্রের দায় তো বিশ্ববিদ্যালয় বা হল নেবে না।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, একজন সাবেক শিক্ষার্থীকে মার্কেটে চাঁদাবাজির অভিযোগে ধরে রেখেছে বলে আমরা শুনেছি। তাকে পুলিশে দিয়েছে সেটা মাত্র শুনলাম। যেহেতু সে হলে থাকে তাহলে সেটা হল প্রশাসন দেখবে। বর্তমানে সে যেহেতু আমাদের শিক্ষার্থী না, তাই আমাদের এখানে কোনো দায় নেই। ফলে বিধি অনুযায়ী তাকে কোনো শাস্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিতে পারবে না। সরকারের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে।

এর আগে, ২০১৪ সালে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়ে ছাত্রলীগ। এরপর ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মরত এক সাংবাদিককে হেনস্তার সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া তিনি আরও বেশকিছু কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত ছিলেন।