অছাত্র ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও আনলেন ৩০ জন অছাত্রকে

  © ফাইল ফটো

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার প্রায় এক বছর পর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। এই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ  ৩০ জনের মতো নেতার ছাত্রত্ব নেই। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বিবাহিত এবং চাকরিজীবী। অনেক দেরিতে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা এবং অছাত্র, পেশাজীবী এবং বিবাহিতদের পদ দেওয়ার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদ না পাওয়া ত্যাগী নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী পোমেল বড়ুয়াকে সভাপতি ও একই শিক্ষাবর্ষের রসায়ন বিভাগের মাহফুজুর রহমান শামীমকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

তবে কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগে মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর গত বুধবার (১৫ মে) রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির  অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, এই কমিটির অন্তত ৩০ জন নেতার ছাত্রত্ব নেই। তবে তাদের রেখেই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এজন্য অনেকে পদবঞ্চিত হয়েছেন।

বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছাত্রত্ব অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তারা এখন আর শিক্ষার্থী নন। তা ছাড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আরও অন্তত ৩০ জনের ছাত্রত্ব নেই। এমন অবস্থায় অছাত্রদের নিয়ে কমিটি গঠন সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতাদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি করেছে। এতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে চরম স্থবিরতা দেখা দিতে পারে।”

পূর্নাঙ্গ কমিটিতে পদ পাওয়া সহ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সভাপতিকে উল্লেখ করে লেখেন, এটা কোন ধরনের মশকরা জানতে পারি পোমেল বড়ুয়া( ছাত্রলীগ সভাপতি)? বেরোবি তথা বেরোবি ছাত্রলীগ তথা ছাত্ররাজনীতির ইতি টেনে এসেছি ৩১ডিসেম্বর ২০২৩। যা ফেসবুক পোষ্ট ও ব্যক্তিগত ভাবেও বলে আসার পরেও আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করে কমিটিতে এমন পদ কেন দেওয়া হলো? নোংরামিরও একটা লিমিট আছে। আমাকে নিয়ে যে নোংরামিটা করেছেন আপনার রাজনৈতিক জীবনে এর যথোপযুক্ত জবাব পেতে প্রস্তুত থাকবেন আশাকরি।

পদ বঞ্চিত মোঃ মাসুদ রানা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে লেখেন, আমার জখমের দাগে এখন ব্যথা করে ভুলতে পারি নাই সেই রাতের কথা। ৭ টা সেলাই আর রক্ত ক্ষরণ, তবুও সবাই আমাকে ভুলে গেছে। একটা প্রোগ্রামে ২০ থেকে ২৫ জন ছোট ভাই নিয়ে সবার আগে আমি উপস্থিত ছিলাম। সবটুকু দিয়ে রাজনীতি করেছি এমন কোন মিছিল মিটিং নেই আমি অংশগ্রহণ করি নাই,। ক্যাম্পাসে কোন ঝামেলা হলে আমি সবার আগে চলে যাই, আমার সবই ছিলো শুধু একটা রেফারেন্স করার মত কেউ  ছিলো না। আমার, যাই হোক আমার সকল ছোট ভাইদেরকে অভিনন্দন। যাদের যোগ্যতা নেই ২ টা ছেলে নিয়ে প্রোগ্রামে উপস্থিত হয়। সারাদিন ডেকেও প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া যায় না। যাইহোক আমি এখনও সেই আমেজে আছি, ছেড়ে দেই নাই, যতদিন আছি আপনার সাথেই আছি থাকবো।

তিনি আরও বলেন,আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, আমি সবসময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করি। যারা কখনো মিটিং মিছিলে উপস্থিত হয়নি তারা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পোস্ট পেয়ে মজা নিচ্ছে। আর যারা পরিশ্রম করেছে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। 

সামাজিক মাধ্যমে আব্দুর রাজ্জাক লেখেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ৩/৪ দিন পর থেকে আমার ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ। তখন থেকে দেখা এখন পর্যন্ত যাদের দেখতেছি হাতে গোনা কয়েকজন অনেক পরিশ্রম করেছে। বেরোবির ছাত্র রাজনীতিতে কতটুকু অবদান ছিলো, সেটা শুধু যারা দেখেছে তারাই জানে। অথচ আমার হল এর সীট নিয়ে তারা অনেক তাল বাহানা করেছে।  আসলে রাজনীতিতে সবাই সান্ত্বনা মুলক কথা বলে কিন্তু তারা কারো মনের অবস্থার দিকে একবার তাকিয়ে দেখেও না। বেরোবির ছাত্র রাজনীতিতে ত্যাগিদের অসম্মান করা কতটা সময় উপযোগী শুধু কর্তৃপক্ষ ভালো জানেন। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, হয়তো অনেককেই কাঙ্খিত পদে আসীন করতে পারি নি আমরা। অনেকের নাম বাদ পড়েছে। এতে আমরাও ব্যথিত। বাস্তবতার নিরীক্ষণে আমাদের আসলে কিছুই করার ছিল না। তদুপরি কর্মীদের বিবেচনায় হয়তো শতভাগ সফল হতে পারি নি। জাতীয় নির্বাচন, নেতৃত্ব বাছাই, সংকটে কমিটি হয়তো কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।

ছাত্রত্ব প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনে কথা বলতে রাজি হননি।

ছাত্রত্ব শেষ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “ কমিটি হওয়ার পর আমার মাস্টার্সের রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছিল। কারণ আমার ইমপ্রুভমেন্ট ছিল। তাই দেরিতে রেজাল্ট হয়েছিল।

 

সর্বশেষ সংবাদ