পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা হয়নি আংশিক কমিটির অধিকাংশ নেতার
প্রায় দুই বছর আগে আংশিক কমিটিতে জায়গা হলেও দুই বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি স্থান পাননি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতা। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা। আংশিক কমিটিতে থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থেকে বাদ পড়া তিন নেতা জানিয়েছেন লিখিত প্রতিবাদও। তবে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন ছাত্রত্ব না থাকা, রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়তা ও দায়িত্ব অবহেলায় তাদের ব্যাপারে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২০২২ সালের ২৯ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ১৮ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয়। এরপর গত ২৪ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শাখা ছাত্রলীগের ১৯৯ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করে।
যে তিনজন অভিযোগ করেছেন তাদের কারোরই এখন আর ছাত্রত্ব নেই। কোনো অছাত্রকে আমরা কমিটিতে রাখতে পারি না। -তায়েফুর রহমান, সভাপতি
পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আংশিক কমিটির মাত্র ৩ জন পদ পেয়েছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান এবং সহ-সভাপতি মো ইমরান সিদ্দিকী প্রান্তর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বহাল আছেন। আর ১৮ সদস্যের আংশিক কমিটির ১৫ জনই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা পাননি। আংশিক কমিটিতে পদপ্রাপ্ত হলেও ১৯৯ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নাম না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছে এসব নেতারা। এদের মধ্যে পদ না পাওয়া তিন নেতা জানিয়েছেন লিখিত প্রতিবাদ।
আলাদা আলাদা লিখিত প্রতিবাদলিপিতে আংশিক কমিটিতে সহ-সভাপতি পদপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দেলোয়ার হোসেন এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রাপ্ত সজীব চন্দ্র সরকার ও সামিউল হায়দার মিফতা কোনো প্রকার কারণ বা নোটিশ ছাড়াই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ না পাওয়ায় বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।
প্রতিবাদলিপিতে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। আংশিক কমিটিতে সহ-সভাপতি ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আমাদের কোনো পদ দেওয়া হয়নি। শাখা ছাত্রলীগ থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করার সময় নিজেদের প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি চরিতার্থ করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অগোচরে অত্যন্ত সুকৌশলে পদগুলো থেকে আমাদের নাম বাদ দিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান।
আংশিক কমিটির মাত্র ৩ জন পদ পেয়েছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান এবং সহ-সভাপতি মো ইমরান সিদ্দিকী প্রান্তর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বহাল আছেন।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ না পাওয়া নেতারা বলছেন, এ বিষয়টি সম্পর্কে আমরা কোনোভাবেই অবগত ছিলাম না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এমন হীন, জঘন্য, প্রতিহিংসামূলক ও অপরাজনীতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবার মতই জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে রাজনীতি করছি। ছাত্ররাজনীতির ধারাবাহিকতায় আমি বাকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী হই। কোনোভাবেই আংশিক কমিটির নেতৃবৃন্দকে বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি সুপারিশ করার এখতিয়ার ইউনিট কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক রাখেন না।
জানতে চাইলে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান বলেন, সাংগঠনিক কার্যক্রমে তাদের অনুপস্থিতির কারণে তাদের পদে অন্যদের পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়া এসব নেতাদের কেউই এখন আর ক্যাম্পাসে থাকেন না।
কোনোভাবেই আংশিক কমিটির নেতৃবৃন্দকে বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি সুপারিশ করার এখতিয়ার ইউনিট কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক রাখেন না। -পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বাদ পড়া দেলোয়ার
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, যে তিনজন অভিযোগ করেছেন তাদের কারোরই এখন আর ছাত্রত্ব নেই। কোনো অছাত্রকে আমরা কমিটিতে রাখতে পারি না। এছাড়াও কমিটি গঠনের এই দুই বছরে তারা সাংগঠনিক কোনো দায়িত্ব পালন করেনি। তাদের কাজের কোনো প্রমাণও তারা দিতে পারবেন না। সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনেও ছিল তাদের অবহেলা।
তায়েফুর রহমান বলেন, এসব বিষয়ে কারণ দর্শানোর জন্য তাদের হলের ঠিকানায় একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির কোনো সদস্য পরপর দুইটি সাধারণ সভায় অংশগ্রহণ না করলে ওই সদস্যের সদস্যপদ থাকবে না। এমতাবস্থায় আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সক্রিয় কর্মীদের রাখার জন্য সুপারিশ করেছি। যারা সংগঠনের জন্য কাজ করবে তারাই কমিটিতে পদ পাওয়ার যোগ্য।