ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ: ভয়াবহ অভিজ্ঞতা জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
‘ঘটনাটা আমার স্বাভাবিক মনে হয়নি’, বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলিশবা জাভেদ। যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিনে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের ক্যাম্পাসে যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৩০ জনের একটি দল ঢুকছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে নিজের অনুভূতি কেমন ছিল, সে সম্পর্কে জানাচ্ছিলেন তিনি।
জাভেদ ও তাঁর কয়েকশ সহপাঠী ক্যাম্পাসে চুনাপাথরের ৯৪ মিটার উঁচু টাওয়ারের ছায়ার নিচে জড়ো হয়েছিলেন। গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে ক্লাস বর্জন কর্মসূচির অংশ হিসেবেই সেখানে সমবেত হওয়া তাঁদের।
আন্দোলনরত এই শিক্ষার্থীরা আশা করছিলেন, ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্পর্কচ্ছেদ করবে। সেটি না হয়ে উল্টো দেখা গেল ক্যাম্পাসে ক্রমেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বেড়ে চলেছে।
জাভেদের হিসাবে ক্যাম্পাসে আগে থেকেই অন্তত ৫০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন। ওই দিন তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় ৩০ জনের মতো দলটি। তারা সজ্জিত ছিল দাঙ্গা পুলিশের পোশাকে। তিনি বলেন তাঁদের বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু ভেতরে ছিল টানটান উত্তেজনা। পুলিশ সদস্যরাও তাঁদের দিকে এগোতে শুরু করেন।
২২ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী বলছিলেন, ‘এটিই ছিল প্রথম মুহূর্ত, যখন আমি সত্যি ভয় পেয়ে যাই।’
২৪ এপ্রিল দিনটিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে শুরু হয় দুই পক্ষের সংঘর্ষ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের দৃশ্যগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে অনলাইনে। একই সময় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও চলছিল অনুরূপ বিক্ষোভ।
টেক্সাসবাসীর ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ দেখানোর সুযোগ অন্যদের মতো নয়। তাঁদের সামনে রয়েছে ভিন্ন ধরনের এক চ্যালেঞ্জ। ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে এই অঙ্গরাজ্যের সরকারের হাতে আইন রয়েছে। তারা সেটি প্রয়োগও করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চলছে বিবাদ।
২০১৭ সালে অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এক আইনে সই করেন। এ আইনে ইসরায়েলকে বয়কট করা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পরে আইনটি আরও কঠোর করার পদক্ষেপ নেয় স্থানীয় সরকার। অ্যাবট বর্তমানে চলা বিক্ষোভকে ‘ঘৃণাভরা’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিক্ষোভকারী ও তাঁদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভুল ধারণার জন্ম দিচ্ছে এই বক্তব্য।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আশা করছিলেন ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্পর্কচ্ছেদ করবে। সেটি না হয়ে উল্টো দেখা গেল ক্যাম্পাসে ক্রমেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বেড়ে চলেছে।
এর বাইরে, চলতি বছরের শুরুতে একটি আইন কার্যকর করেছে টেক্সাস সরকার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ আইনে তাদের ‘ডাইভারসিটি, ইকুইটি ও ইনক্লুশন (ডিইআই)’ দপ্তর বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়কর্মী আল–জাজিরাকে বলেছেন ওই আইনের কারণে ডিইআই কর্মীরা চলে যেতে বাধ্য হওয়ায় ক্যাম্পাসগুলোতে এখন আগের চেয়ে কম নিরাপদ হয়ে পড়েছেন নানা বর্ণের শিক্ষার্থীরা।
২৯ এপ্রিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাঁদের ওপর পিপার স্প্রে ও প্রচণ্ড শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করে পুলিশ। এ সময় তারা বিক্ষোভকারীদের ঘিরে ফেলে ও চিৎকার করতে করতে অনেককে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।
হিবা ফারুকি ২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী। জানাচ্ছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতা, বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে তিনি আহত হন। তাঁর হাঁটু থেকে রক্ত ঝরছিল।ভীষণভাবে আহত না হওয়ায় হিবা নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করেন। তিনি বলেন, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজে থেকে পুলিশ ডেকেছে, আবার আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় চিকিৎসক ডেকেছে, বিষয়টি ভেবে হকচকিত তিনি।
হিবা ফারুকি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বর্ণবাদী ভাবধারার কিছু মানুষ রয়েছেন। তাঁরা কথা বলতে দিতে চান না। আছেন জেনোফোবিক (বিদেশিদের ব্যাপারে অহেতুক ভয় বা ঘৃণা পোষণ) মনোভাবের মানুষও। তাঁরা তা স্বীকার করতে চান না। আছেন বাদামি বর্ণের বিক্ষোভকারীরাও। এসবই পুলিশকে মারমুখী হয়ে উঠতে উৎসাহ জোগাচ্ছে।’
ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় শিক্ষার্থী, আইনজীবী ও পরামর্শকেরা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, টেক্সাস সরকার তাঁদের ধ্যানধারণা বদলাতে বাধ্য করছে ও সরকারের স্পষ্ট বৈরিতার শিকার হচ্ছেন তাঁরা।
হিবা বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের তাড়াতে সহিংসতাকে ব্যবহার করছে টেক্সাস সরকার।’