১৪ বছরেও কমিটি পায়নি ববি ছাত্রলীগ, নেতারা বলছেন—ঈদের পর
২০১১ সালে যাত্রা শুরু হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি)। এবার ১৪ বছরে পদার্পণ করেছে। ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের মতো ছাত্র সংগঠন তাদের কমিটিও দিয়েছে। তবে কমিটি পায়নি ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় নেতারা কয়েকবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। তবে আগামী ঈদের পর কমিটি হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
জানা গেছে, কমিটি না থাকায় ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই দ্বন্দ্বে জড়ান সংগঠনটি কর্মীরা মাঝে। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। গত এক বছরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে অন্তত ১৫ বার। এতে বিভিন্ন পক্ষের অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। জেলও খেটেছেন অনেকে। মাঝেমধ্যে সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরাও নির্যাতিত হয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে।
বর্তমানে কমিটিহীন ববি ছাত্রলীগে রয়েছে কয়েকটি দল-উপদল। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারীরা আলাদা আলাদাভাবে সক্রিয় রয়েছেন। এর বাইরে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও বরিশাল সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) ও সাবেক মেয়র সাদেক আব্দুল্লাহসহ আওয়ামী লীগে একাধিক নেতার অনুসারীদের ক্যাম্পাসে প্রভাব রয়েছে বলে জানা গেছে।
কমিটি না থাকায় ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই দ্বন্দ্বে জড়ান সংগঠনটি কর্মীরা মাঝে। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। গত এক বছরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে অন্তত ১৫ বার। এতে বিভিন্ন পক্ষের অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। জেলও খেটেছেন অনেকে।
কর্মীদের ভাষ্য, ববি ছাত্রলীগ বিভিন্ন দিবস পালনসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান করছে সংগঠনের ব্যানারে। বিভিন্ন সময়ে অনেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অনেকে পদ না পেয়েই শেষ করেছে ছাত্রজীবন। শিক্ষার্থী বান্ধবকাজ করে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন কয়েকজন। তবে কারও কমিটির মুখ দেখা হয়নি। কবে কমিটি হবে, সে উত্তর জানা নেই কারও।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রলীগের আগের কর্মীদের চেয়ে বর্তমানে শীর্ষ পর্যায়ে থাকা কর্মীরা অনেকটাই ভিন্ন। শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যায় তাদের পাশে পাওয়া যায়। তবে অনেকে ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি, মাদক কারবারিসহ নানা ধরনের অপকর্মে জড়িত বলে তারা জানিয়েছেন। ছাত্রলীগের নাম ব্যাবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে বালুর ড্রেজার, রাস্তার কাজের ঠিকাদার ও নির্মাণাধীন ভবনের মালিকের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, জোর করে অন্যের দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। কমিটি না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারেনি সংগঠনটি।
ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে রাজনীতি করছেন। বিভিন্ন জাতীয় ও সাংগঠনিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু একটা বিভাগীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি নেই, এটা দুঃখজনক। তারা বলছেন, তারা আশায় আছেন, কমিটি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক খুব শিগগিরেই কমিটি দেবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি তাদেরকে নিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব কমিটি উপহার দেবে। যার মাধ্যমে তাদের একটি সাংগঠনিক পরিচয় হবে।
এ বিষয়ে ৭১’র চেতনা সংগঠনের সভাপতি ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি দরকার। কারণ একটি সংগঠনের শৃঙ্খলার জন্য বা চেইন অব কমান্ড রক্ষার্থে সাংগঠনিক পরিচয় থাকাটা জরুরি।
বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি লস্কর নুরুল হক বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি থাকা প্রয়োজন।প্রতিটি সংগ্রামে ছাত্রদের অবদান রয়েছে। তবে আগে যেভাবে ছাত্র সংগঠনগুলো দেশের জন্য কাজ করেছে, তা এখন হ্রাস পেয়েছে, যা দুঃখজনক।
আরো পড়ুন: মাথায়-হাতে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে শান্তির বার্তা ছড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র
২০১৯ সালের ১৭ জুন ববিতে সংক্ষিপ্ত এক সফরে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ছাত্রলীগের ১১১তম সাংগঠনিক ইউনিট হবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন সময়ে এমন আশার বাণী শোনানো হলেও হয়নি কমিটি।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঈদের পরে হবে। এতে প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটি হিসেবে তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে ছাত্রলীগ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান কান্ডারি হিসেবে ছাত্রলীগ কাজ করছে।