জাবিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি মুছে প্রধানমন্ত্রীর ব্যঙ্গচিত্র, অনশনে ছাত্রলীগ নেতা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তিসহ তিন দফা দাবিতে একাই আমরণ অনশনে বসেছেন সংগঠনটির এক নেতা। তার এ কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে আমরণ অনশন শুরু করেন ওই ছাত্রলীগ নেতা। সংগঠনটির ওই নেতার নাম এনামুল হক এনাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
তার দাবিগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননাকারীদের অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় আইনে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; আট দিন পার হলেও জড়িতদের ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা তদন্ত করতে হবে।
অনশনের বিষয়ে জানতে চাইলে এনামুল হক এনাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি মুছে ফেলার পর আটদিন পার হয়েছে। তবে এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। অনেক চাপাচাপির পর লোক দেখানো তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। যেখানে ব্যঙ্গচিত্র আঁকার পর তারা অহংকারবোধ থেকে বিবৃতি দিয়েছে। আবার তাদের অফিসিয়াল পেজ থেকে প্রচারও করেছে। তাহলে তদন্ত কমিটি কিসের জন্য! অপরাধীদের ছাড় দেওয়ার জন্য নাটক করা হচ্ছে।
ছাত্রলীগের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করে তিনি বলেন, যেখানে বঙ্গবন্ধু ১৮ কোটি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা। সেখানে একটি রাজনৈতিক দল তার প্রতিকৃতি মুছে দেওয়া মতো সাহস দেখালো, ছাত্রলীগ কি এতটাই দুর্বল নাকি? এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শীর্ষ নেতাদের বারবার আল্টিমেটাম দিলেও তারা কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এখানে স্পষ্ট যে, তারা নাটক করছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি প্রতিকৃতি আঁকা ছিলো। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডের পর গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে একটি গ্রাফিতি অঙ্কন করে ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদের একাংশের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী ছাত্র ইউনিয়নের এই অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন।
গ্রাফিতি অঙ্কনের বিষয়টি স্বীকার করে ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জোগাতে এবং নিপীড়কদের হুঁশিয়ারি দিতে নতুন গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। আঁকার প্রায় তিন বছর পার হওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। এছাড়া পাশের দেয়ালে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিশাল, স্পষ্ট ও নান্দনিক চিত্রকর্ম দৃশ্যমান ছিলো। তাই চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতার ভিত্তিতে এই গ্রাফিতি আকাঁ হয়েছে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বাংলা বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার শামীম আহমেদ ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজউদ্দীন।
এছাড়া কমিটিতে সদস্য- সচিব হিসেবে রয়েছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন-২) এ বি এম আজিজুর রহমান। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, সে (এনামুল হক এনাম) যেসব দাবি জানিয়েছো। আমরাও প্রশাসনের কাছে একই দাবি জানিয়েছি। অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার দাবি করেছি। প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, তারা ব্যবস্থা নেবেন। আমরা প্রশাসনের ব্যবস্থা দেখে পরবর্তী কর্মসূচিতে যাব।