শীর্ষ দুই নেতার কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ কর্মীরা, একজনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
শীর্ষ দুই নেতার (সোহেল-লিটন) অশোভন আচরণ, চাঁদাবাজি, নিজ স্বার্থ কেন্দ্রিক আখের গোছানোসহ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগ। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন সংগঠনের কর্মীরা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিভিন্ন অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন তাঁর অনুসারীরাই।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে জাবি ছাত্রলীগের এমন ঘটনা নতুন নয়। বিগত বছরের কমিটিগুলোতেও মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে দেখা গেছে এমন অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলা।
২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আকতারুজ্জামান সোহেলকে সভাপতি এবং ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান লিটনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এই ঘোষণার তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নিয়ম থাকলেও ১১ মাস পর ৩৯০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। অথচ শাখা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদই এক বছর।
এর আগের ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঘোষণা করা জুয়েল রানা ও আবু সুফিয়ান চঞ্চলের কমিটি প্রায় ৫ বছর পর ২০২১ সালে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তার আগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১২ সালে। মাহমুদুর রহমান জনি ও রাজিব আহমেদের সেই কমিটিও দায়িত্বে ছিল ২০১৬ পর্যন্ত। ওই দুই কমিটির বিদায়ও নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে হয়েছে।
এবারও জমি দখল, নেতাকর্মীর সঙ্গে অশোভন আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে তারই অনুসারীরা। গত মঙ্গলবার ওই ঘোষণার পর উত্তপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে কর্মীদের নিয়ে মনে মনে ক্ষোভ থাকলেও সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পর সেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসে বিদ্রোহের রূপ নিয়েছে।
এবারের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিও সেই পথে হাঁটছে-এমন মন্তব্য করে একাধিক নেতাকর্মী জানান, সভাপতি-সম্পাদকের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করছে। এর বহিঃপ্রকাশ হয়েছে সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণার মধ্য দিয়ে।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে জাবি ছাত্রলীগের এমন ঘটনা নতুন নয়। বিগত বছরের কমিটিগুলোতেও মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে দেখা গেছে এমন অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলা।
জাবি শাখার নেতাকর্মীরা জানান, ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আকতারুজ্জামান সোহেলকে সভাপতি এবং ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান লিটনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এই ঘোষণার তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নিয়ম থাকলেও ১১ মাস পর ৩৯০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। অথচ শাখা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদই এক বছর। গত বছরের ৩ জানুয়ারি এই কমিটির মেয়াদ ফুরালেও নতুন কমিটি হয়নি। বর্তমানে কমিটির সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ প্রায় দেড়শ জনেরই ছাত্রত্ব নেই।
আরও পড়ুন: জাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্চিত করলো অনুসারীরা
বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে। এর মধ্যে সাংবাদিককে মারধর, চাঁদাবাজি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ডে বাধা, সাধারণ মানুষকে তুলে এনে মুক্তিপণ আদায়ের মতো অভিযোগও রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনের এক কর্মী বলেন, এখন যে পরিস্থিতি চলছে তাতে অবশ্যই নতুন নেতৃত্ব লাগবে। আমরা তাদের অপকর্মে কোথাও মুখ দেখাতে পারি না। সভাপতি-সম্পাদক নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত।ফলে নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাই ক্যাম্পাস স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত নতুন কমিটির প্রয়োজন।
সংগঠনের সহ-সভাপতি ফারহান আঞ্জুম তানজিল বলেন, ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি বর্তমান এই কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। সে হিসেবে কাগজে-কলমে বর্তমান কমিটি অবৈধ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে অতি দ্রুত এই অবৈধ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে যোগ্য ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনতে হবে।
“বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত আছি। এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে একটু সময় প্রয়োজন। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে-ইনান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক
এ বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে একাধিকবার ফোন দিলেও পাওয়া যায় নি। তবে এর আগে অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আমি সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসেই থাকি। তাই শুধু নিজের স্বার্থের কথা ভাবি, এমন কথা ঠিক নয়। আর জমি দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে কেউ কোনো উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারবে না।
সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, বর্তমান কমিটি নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগের বিষয়ে আমি জানি না। অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
শাখাটির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ও সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত করার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত আছি। এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে একটু সময় প্রয়োজন। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।