তোকে একেবারে খুন করে ফেলব— কর্মকর্তাকে হুমকি পাবিপ্রবি ছাত্রলীগের
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের (পাবিপ্রবি) পাঁচ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এক কর্মকর্তাকে হেনস্তা ও হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে। আজ রবিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের শারীরিক শিক্ষা দপ্তর এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলেন, রাফাত বিন ইসলাম শোভন (বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক), আলমাছুর রহমান অয়ন (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক), জহির রায়হান (হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক), লিখন এবং শান্ত (বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী)। জানা যায়, তাদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর অনুসারী।
ভুক্তভোগী কর্মকর্তার নাম শেখ শাহ জামাল। তিনি শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার। এ ঘটনায় আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, রোববার দুপুর ১.৪৫ মিনিটে একটি নাম্বার থেকে তার ফোনে কল আসে। তিনি তখন ট্রেজারার অফিসে ছিলেন। সেখান থেকে অয়ন, শোভন, লিখন, জহির, শান্ত সহ ১৫ থেকে ১৮ জন ছেলে তাকে শারীরিক শিক্ষা দপ্তরে ডেকে এনে হেনস্তা করেন মৃত্যুর হুমকিসহ তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। এ সময় তাকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য বলেন, না গেলে খুন করে ফেলার হুমকি দেন। অভিযোগ পত্রে ভুক্তভোগী কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চাকরির নিরাপত্তা ও হত্যার হুমকির বিচার চেয়েছেন।
এই ঘটনার একটি অডিও এই প্রতিবেদকের হাতে আসে। ওই অডিওতে ভুক্তভোগী কর্মকর্তার সাথে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডার কথা শোনা যায়। ওই অডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘তোকে একেবারে খুন করে ফেলব’।
ভুক্তভোগী কর্মকর্তা শাহ জামাল বলেন, ওরা দুপুরে এসে আমার কাছে ফেদার কেনার জন্য টাকা চায় কিন্তু আমি বলেছি লিখিত আবেদন করতে। তারা সেটা করতে রাজি হয়নি বরং তারা আমাকে তাৎক্ষণিক টাকা দিতে বলে। আমি সেটা করতে অপারগ হলে ওরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন। এরপর আমার শার্টের কলার চেপে আমাকে বের করে নিতে চায়। একটা পর্যায়ে অয়ন আমাকে খুন করে ফেলার হুমকি দেন। এ নিয়ে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি প্রশাসনের কাছে আমার নিরাপত্তা এবং আমাকে হত্যার হুমকির বিচার চাই।
তবে ভুক্তভোগী কর্মকর্তার করা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারা জানান, ব্যাডমিন্টন খেলার সরঞ্জামের চাওয়ার জন্য তারা দুপুরে শারীরিক শিক্ষা দপ্তরে যান। সেখানে ঐ কর্মকর্তা তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। ঘটনার এক পর্যায়ে ওই কর্মকর্তা আলমাছুর রহমান অয়ন এবং লিখনের ওপর হামলা করলে তারা আহত হয়। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে গিয়ে প্রক্টরকে ঘটনাটি জানান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
এই বিষয়ে আলমাছুর রহমান অয়ন বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে আমরা ব্যাডমিন্টন খেলার ফেদারের জন্য উনাকে বলছি। উনি আমাদের দুই বক্স ফেদার দেওয়ার কথা কিন্তু উনি দিচ্ছেনা। আজকে আমরা উনাকে অনেকবার ফোন দিলাম কিন্তু উনি ফোন ধরেননি। পরে উনার দপ্তরে যাই বিষয়টা জানার জন্য। কিন্তু উনি আমাদের সাথে ওখানে খারাপ ব্যবহার করেন এবং আমাদের গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে উনি আমাদের ওপর হামলা করেন এবং আমরা দুইজন আহত হই। আসার সময় তিনি আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন।
তবে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, দুপুরে শুনেছি ছাত্রলীগে সাথে এক কর্মকর্তার কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে আমি এর আগে অফিস থেকে বের হয়ে আসি। ঘটনাটি বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে বলছেন। তাই কার দোষ সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, আমি সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অফিসে ছিলাম। এ নিয়ে কোনো অভিযোগপত্র আমার কাছে আসেনি।
তবে ভুক্তভোগী কর্মকর্তা শাহ জামাল দাবি করেন, রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগপত্র পৌঁছানো হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি যে সেটার গ্রহণ করেছেন সেটা অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।