গ্রুপভিত্তিক খণ্ড কর্মসূচিতে চলছে ছাত্রদল, একসঙ্গে হচ্ছে না মিছিল
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি ও নির্বাচনী তফসিল বাতিল এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। এর সমর্থনে নানা কর্মসূচির বাস্তবায়ন দলটির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তবে তাদের কর্মসূচি পালন হচ্ছে গ্রুপভিত্তিক। এছাড়াও সমমনা কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্রঐক্যর ব্যানারেও কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি সংগঠনটি। যদিও ছাত্রদল নেতারা বলছেন, একসাথে কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে না পুলিশের হামলা-মামলা এড়ানোর কৌশল হিসেবে।
জানা গেছে, চলমান হরতাল-অবরোধে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিল ছাড়া বড় ধরনের কোনও কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। যদিও গ্রুপভিত্তিক এমন রাজনীতিকে নেতাকর্মীরা কৌশলের অংশ বলে দাবি করছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, একসঙ্গে অনেক নেতাকর্মী জড়ো হলে হামলার শিকার বা গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রদলে গ্রুপভিত্তিক রাজনীতির রেওয়াজ রয়েছে। এসব গ্রুপ যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ কয়েকজনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা এসব নেতাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ছাত্রদলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর বিএনপি হরতাল-অবরোধ ঘোষণা করে। এরপর প্রায় ২৪ দিনে কয়েকদফা কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে ছাত্রদল বড় কোনো জমায়েত করেনি।
এর পরিবর্তে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভাগ হয়ে মিছিল করেছেন। এতে ৫ জন থেকে সর্বোচ্চ ৩০ জন পর্যন্ত উপস্থিতি দেখা গেছে। মিছিলের সময় হয় খুব স্বল্প। ব্যানার ধরে কিছুক্ষণ স্লোগান দিয়ে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন তারা। কিছু নারী কর্মীকেও দেখা গেছে অংশ নিতে। নেতাকর্মীরা বলছেন, গ্রুপভিত্তিক হওয়ায় মিছিলে লোক সংখ্যা কম থাকছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের একাধিক নেতা বলেন, কোনো রকম ব্যানার খুলে ছবি তুলে সাথে সাথে কর্মসূচি শেষ করে ফেলা হয়। অধিকাংশের কর্মসূচির চেয়ে ছবি তোলায় আগ্রহ বেশি । নিজেদেরকে জাহির করার জন্য তারা এই কাজ করে। এছাড়াও গ্রুপে ভাগ হয়ে মিছিল করার কারণে লোক অনেক কম থাকে। ২/৩ মিনিটের মধ্যে শেষ হয় মিছিল।
এছাড়াও ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্রঐক্যর ব্যানারে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। এটাও ছাত্রদলের ব্যর্থতা। নাম সর্বস্ব দল নিয়ে ঐক্য গঠনের সমালোচনা করেন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা।
আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের অনুসারী ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আকতার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকার আমাদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। বাড়িতে রাতে ঘুমাতে দিচ্ছে না। তবুও সবাই যার যার জায়গা থেকে আন্দোলন করছে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে সবাই আলাদা আন্দোলন করছে। কারণ একসঙ্গে হলে সবার ওপর একসাথে হামলা করার পরিকল্পনা করবে। সামনে আন্দোলন আরো জোরদার হবে।
আরো পড়ুন: বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান গ্রেপ্তার
বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের অনুসারী ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাফি ইসলাম গ্রুপিংয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আমাদের ইন্টার কমিউনিকেশন আছে। যারা সমালোচনা করছেন, তারা আন্দোলনে নেই। আলাদা আলাদা কর্মসূচি আমাদের পরিকল্পনারই অংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের অনুসারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের এক নেতা বলেন, বর্তমানে বড় কোনো জমায়েত করে কর্মসূচি পালন করার পরিবেশ নেই। তাই ক্যাম্পাসের আশপাশে গ্রুপভিত্তিক খণ্ড খণ্ড কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। এতে সবাই অংশগ্রহণ করছে বলে জানান তিনি।
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে আমরা এক দফা দাবি আদায়ে হরতাল-অবরোধে যখনই রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে চাই, তখনই পুলিশ-র্যাব, ডিবি-সাদা পোশাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগও নিজেদের ডিবি পরিচয়ে, ছাত্রলীগ-যুবলীগ, এমনকি বিজিবিও আমাদের উপর পৈশাচিক হামলা চালায়। তারপর ৩/৪ দিন গুম করে রাখে গ্রেফতার করে, মিথ্যা মামলায় ফাসায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
“এতে ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, অসংখ্য নেতা-কর্মীদের হামলা করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। তারপরও আমরা বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাজপথে ছাত্রদল লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।”
এ বিষয়ে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।