ক্যাম্পাসকে ছাত্রলীগের কাছে ইজারা দিয়েছে ঢাবি প্রশাসন: ছাত্রদল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদলের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পূর্ণ অপসহায়তা করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ক্যাম্পাসকে ছাত্রলীগের কাছে প্রশাসন ইজারা দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে ছাত্রদলের।
আজ বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে ঢাবি ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন মদদে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক এবং ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইমাম আল নাসের মিশুক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও অমর একুশে হল ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসীম খানের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এর আগে গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক ফারহান মো. আরিফুর রহমানকে কার্জন হল থেকে অপহরণ করে নির্মমভাবে শারিরীক নির্যাতন করে ছাত্রলীগ। ফারহানকে উদ্ধার করার জন্য প্রক্টরের সহযোগিতা চাওয়া হলে তিনি নিরব থাকেন। একপর্যায়ে প্রক্টর নিজেই পুলিশ ডেকে এনে ফারহানকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করান বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ক্যাম্পাসে সবগুলো নির্যাতনের ঘটনায় প্রক্টর প্রথমে নিরব থেকে ছাত্রলীগকে হামলা এবং নির্যাতন চালানোর সুযোগ করে দেন। পরবর্তীতে নির্যাতিত ছাত্রদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। পুরো প্রক্রিয়াতে ছাত্রলীগের সাথে প্রক্টর এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে সুস্পষ্ট যোগসাজশ বিদ্যমান।
আরও পড়ুন: ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে সিট সংকট ও অব্যবস্থপনার প্রতিবাদে মানববন্ধন
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একই প্রক্রিয়ায় ছাত্রদলের নেতাকর্মী ছাড়াও অসংখ্য অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগকে দিয়ে শারিরীক নির্যাতন এবং পরবর্তীতে মিথ্যা মামলার আসামি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রক্টর এবং হল প্রশাসন এই কাজে সরাসরি জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ের পরিবেশ বজায় রাখা এবং বাকস্বাধীনতাকে স্তব্ধ করার জন্যই ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যৌথভাবে তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে।
ছাত্রলীগ কোনো শিক্ষার্থীর উপরে আক্রমণ করলে সেটা প্রক্টরকে জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ প্রক্টরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করা থেকে বিরত থাকেন। ছাত্রলীগের নির্যাতন শেষ হলে তিনি পুলিশ ডেকে এনে আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের সাথে পাকিস্তানপন্থী রাজাকার, আলবদর এবং হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতো অমানবিক আচরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বরত শিক্ষকবৃন্দের আচরণে প্রতীয়মান হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবাধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের কাছে ইজারা দিয়েছেন।
আরও জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই বিবেকহীন আচরণের প্রেক্ষিতে প্রশাসনের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম।
এই বিষয়ে নেতারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে দায়িত্বরত শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষকতা পেশাককে কলঙ্কিত করেছেন। বুদ্ধিজীবী এবং পণ্ডিতের মুখোশ পরে দলীয় ক্যাডার এবং পুলিশের চেয়ে জঘন্য কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। তারা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অপসহায়তা করে ফৌজদারি অপরাধ করছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যেসব শিক্ষক জড়িত তাদেরকে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বিচারের সম্মুখীন করা হবে।