ন্যায্য দাবি করলেও গ্রেফতার হচ্ছে শ্রমিকরা: ছাত্রশক্তি
নিহত শ্রমিকদের খুনের বিচার করা, আহত ও নিহত শ্রমিকদের ক্ষতি পুরণ দেওয়া, কারখানা গুলো সচল করা, আটক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি সর্বনিম্ন মজুরি ২৩০০০ টাকা করা এই পাঁচ দফা দাবি নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে সমাবেশ করে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতাকর্মীরা।
সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই সংহতি সমাবেশ শুরু হয়।
গত ২৮ অক্টোবর থেকে দেশেরর বিভিন্ন স্থানে সর্বনিম্ন মজুরি ২৩০০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। শ্রমিকদের এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং শ্রমিক হত্যা এবং পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে এ সমাবেশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রশক্তির একাধিক নেতাকর্মী।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক আখতার হোসেন বলেন, ভোট চুরি করে যারা ক্ষমতায় আছে তাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলতে শুরু করলো তাদের বিরুদ্ধে সরকার প্রথমে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করলো। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে থাকতে পর্যন্ত দেওয়া হয় না।
তিনি আরও বলেন, আজকে আন্দোলনকারী শ্রমিকদেরকে হত্যা করা হচ্ছে, কারাগারে বন্দি করে রাখা হচ্ছে অথচ তারা তাদের ন্যায্য মজুরীর জন্য আন্দোলন করছে। যারা এখন ক্ষমতায় আছে এবং যারা অবৈধভাবে নানাবিধ ভাবে টাকা পয়সা উপার্জন করছে তারা ব্যতীত কেউ এখন আর ভালো নেই।
শ্রমিকদের পরিশ্রমের উপর ভিত্তি করে যে রাষ্ট্র চলে, যাদেরকে দিয়ে বারো থেকে চৌদ্দ ঘন্টা কাজ করিয়ে নেওয়া হয় তাদের পর্যাপ্ত পরিমান খাবারের টাকা দেওয়া হয় না। তারা ন্যুনতম মৌলিক অধিকারটুকুও তারা পুরণ করতে পারে না। অথচ এই শ্রমিকরা যখন আন্দোলনে নেমেছে, আওয়ামীলীগ গুন্ডা বাহিনী দিনের বেলায় অস্ত্রহাতে রাস্তায় নামতে অথচ পুলিশ তাকে ধরার সময় পায় না। অথচ শ্রমিকরা যে ২৩০০০ টাকা বেতনের দাবী করছে সেটা কিন্তু তারা একা ভোগ করে না সেখান থেকেও তারা প্রতিটি কাজে সরকারকে ট্যাক্স দেয়। জনগনের কাছ থেকে ট্যাক্স নিয়ে যারা ভোট চুরি করতে পারে তাদেরকে অবৈধ সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পায়তারা করছে এই সরকার। বাংলার মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা যদি আমাদের ভোটের অধিকার ফিরে না পাই তাহলে আমরা কোনো অধিকার ফিরে পাবো না।
ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব নাহিদ হোসেন বলেন, গাজীপুর মিরপুর আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকরা তাদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনকে ন্যায্য আন্দোলন ঘোষণা করে আমরা তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি। ইতিমধ্যে শ্রমিকদের আন্দোলনে পুলিশি নির্যাতন, মামলা হামলা দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন শ্রমিক মারা গেছেন আরও অনেক অসুস্থ। আমরা বলতে চাই রাষ্ট্র, সরকার ও পুলিশ এদেরকে হত্যা করেছে। কিন্তু এধরনের হয়রানি মামলা, হামলা, হুলিয়া দিয়ে আন্দোলন অবদমিত করা যাবে না। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন সরকার দেখাচ্ছে পদ্মা সেতু আর মেট্রোরেল, দেখাচ্ছে জিডিপির বুলি অন্য দিকে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরীর জন্য আন্দোলন করছে জীবন দিচ্ছে।
গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির ঢাবি শাখার সদস্য সচিব আবুল বাকের মজুমদার বলেন, ২৩ শে অক্টোবর শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরী ২৩০০০ টাকায় রূপান্তরের জন্য আন্দোলনে নেমেছেন এবং সেই আন্দোলন এখনো চলমান। আমরা এই আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি। ডলারের মূল্য আগের থেকে অনেক বেড়েছে কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে না। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির দিকে লক্ষ করলে আট হাজার দশ হাজার টাকা দিয়ে একজন শ্রমিক তার পরিবার চালাতে পারবে না।
ঢাবি শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল কাদের বলেন, এ আন্দোলন শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলন। চলমান মুদ্রাস্ফীতির সময়ে, চলমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সময়ে এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকার পুলিশি নির্যাতন চালাচ্ছে। ফ্যাসিবাদ সরকারের এধরণের শোষণ আমরা যতই মানিয়ে নেই ততই আমাদের ছবক দেওয়া হয় যে মিত্যব্যয়ী হও। আর কত মিতব্যয়ী হতে হবে এখন তো এক কেজি আলু কিনতেও ৮০- ১০০ টাকা লাগে।
এসময় তিনি বলেন, শ্রমিকদের দাবী অবিলম্বে মেনে নিতে হবে। তাদের মজুরি সর্বনিম্ন ২৩০০০ টাকা করতে হবে এবং পুলিশি নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
এছাড়াও সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির যুগ্ম আহবায়ক নুসরাত তাবাসসুম, ঢাবি শাখার আহবায়ক আসিফ মাহমুদসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।