১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:২৯

ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে মতবিনিময় করবে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’

সংবাদ সম্মেলন  © টিডিসি ফটো

‘ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস’সহ আরও কয়েকটি দাবিতে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করবে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য’। আগামী ১৯ অক্টোবর এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জোটের মুখপাত্র ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল জানান। আজ রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন জুয়েল।

তিনি বলেন, ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ঘোষিত ৯ দফার ভিত্তিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ১৫টি ছাত্র সংগঠন সম্মিলিতভাবে প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করছি। এই কর্মসূচির আওতায় আগাসী ১৯ অক্টোবর ঢাকায় ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হবে।

ঢাকার পর রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতেও এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।  

ফ্যাসিবাদী ছাত্র ঐক্যের তিন সমন্বয়ক ছাত্র দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান রিচার্ড এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব বক্তব্য দেন সংবাদ সম্মেলনে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি সংগঠন নিয়ে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য’ গঠিত হয়। সংগঠনগুলো হলো- জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্র দল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্র সমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্র সমাজ (বিজেপি-পার্থ), জাগপা ছাত্র লীগ (তাসমিয়া প্রধান), জাগপা ছাত্র লীগ (খন্দকার লুতফর), ছাত্র জমিয়ত বাংলোদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

গত ৯ অক্টোবর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিটিউশন মিলনায়তনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র কনভেনশন হয়।

ছাত্র ঐক্যের কর্মসূচি: 
আগামী ১৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে অতি দ্রুত রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতেও ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে জনমত সংগঠিত করা হবে।

এভাবেই গণতান্ত্রিক, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক বাংলাদেশের পক্ষে শক্তিশালী জনমত গঠন এবং রাজপথে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদীদের পতন নিশ্চিত করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

তাদের ৯ দফা দাবি হলো:
১. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতনবিরোধী আইন করে শিক্ষাঙ্গনগুলোকে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব মুক্ত করা, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, প্রথম বর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রদের সিট পাওয়ার বৈধ অধিকারের স্বীকৃতি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ। সর্বোপরি সব মতের ও সব সংগঠনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা।

২. শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য হবে মানবিকতার বিকাশ, নৈতিকতাবোধের উন্নতি, মানুষে মানুষে বৈষম্য বিরোধী চিন্তার অনুশীলন এবং সে লক্ষ্য পূরণে শিক্ষা কাঠামো, পাঠদান পদ্ধতি, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব কাজে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ বরাদ্দ করে সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বিকাশে উপযোগী হয়ে জাতীয় সম্পদে পরিণত হতে পারে।

৩. শিক্ষার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, বেতন কাঠামোর পুনঃনির্ধারণ, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার পুনর্বিন্যাসে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। শিক্ষক সংখ্যা বাড়িয়ে আনুপাতিকহারে পর্যাপ্ত উপকরণ সরবরাহ করা। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আরোপ না করা। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি কমানো এবং অভিন্ন নীতিমালা ও বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা।

৪. জ্ঞানকে সহজলভ্য করার জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ফলে সারা বিশ্বের সমস্ত ধ্রুপদী সাহিত্য ও পাঠ্যপুস্তক মাতৃভাষায় রূপান্তরের জন্য একটি জাতীয় অনুবাদ সংস্থা স্থাপন করা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার্থীদের আগ্রহ অনুযায়ী শেখার ব্যবস্থা করা।

৫. ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে ইতিহাসের ব্যক্তিকেন্দ্রিক বয়ান তৈরি করছে এবং জনগণের ভূমিকাকে নির্বাসিত করে চলছে তা এ মুহূর্তে বন্ধ করা। দেশের জনগণকে প্রধান চরিত্র হিসেবে গ্রহণ করে ইতিহাসে সব ব্যক্তির অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা যথাযথভাবে তুলে ধরা। এ লক্ষে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রকৃত ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রচলিত পাঠ্যপুস্তক অবিলম্বে সংস্কার করা।

৬. শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সমস্ত ব্যবস্থা এবং শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। শিক্ষার্থীদের সহজ শর্তে শিক্ষাঋণ দেওয়া। সব শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবীমার অন্তর্ভুক্ত করা। শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া।

৭. সব জাতিসত্ত্বার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর সুযোগের সমতা এবং নাগরিক অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদান করা।

৮. সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সাইবার সিকিউরিট আইনসহ নিবর্তনমূলক সব আইন বাতিল করা।

৯. বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারে আন্দোলনরত দলগুলোর ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা।