এক বছর মেয়াদি কমিটি শেষ হয় না সাড়ে ৫ বছরেও
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি এক বছর মেয়াদের জন্য গঠিত হলেও বর্তমানে অতিক্রম করেছে সাড়ে ৫ বছর। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ও কর্মীদের মাঝে। অন্যদিকে, কমিটি ঘোষণার প্রায় চার বছর পর গত বছরের (১২ জুন) পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে পদে থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে শাখা ছাত্রলীগের পদধারী নেতারা। সম্প্রতি বারে মদ পানের পর টাকা না দিয়ে উল্টো ভাঙচুর করে কয়েক লাখ টাকা ও শতাধিক মদের বোতলসহ বিভিন্ন জিনিস লুট করে আলোচনায় আসে শাখাটি। এরপর এ ঘটনায় মামলা হয় রাজধানীর বনানী মডেল থানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের ২৭ তারিখে তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতি মো. রিপন মিয়া ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে সহ-সভাপতি ১৫ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৫ জনকে নিয়ে ১ বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছিলো।
কিন্তু সাড়ে ৫ বছরেও হল শাখা ও সবগুলো বিভাগের শাখা কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি তারা। এতে নতুন নেতৃত্ব যেমন তৈরি হচ্ছে না, তেমনি সাংগঠনিক চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ, ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এতে একদিকে যেমন কমিটির নেতারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন, অপরদিকে তৈরি হচ্ছে গ্রুপিং। ফলে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, রাজনীতি ছেড়ে সরে যাচ্ছেন অনেকেই। এমতাবস্থায় আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে।
১৫ বছর ধরে ক্যাম্পাসে!
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো: রিপন মিয়া ২০০৮-০৯ সেশনের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র। সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক জুয়েল ২০০৯-১০ সেশনের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের। ১৫ বছর ধরে তারা তিতুমীর ক্যাম্পাসে। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার ও ১০ বছর পার হয়েছে। যদিও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল ক্যাপিটাল ল কলেজের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি রয়েছেন। বর্তমান কমিটির কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজি, মাদক, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও সম্প্রতি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করায় সারাদেশে হাজারো নেতাকর্মী বহিষ্কার করা হলেও তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ এখন পর্যন্ত নিজস্ব ইউনিটের কারো বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্তরা নিজস্ব অনুসারী হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ ছাত্রলীগের একধিক সহ-সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত একই কমিটি বলবৎ থাকায়, তরুণ নেতাকর্মীরা নেতৃত্বের সুযোগ পাচ্ছে না। এতে করে রাজনীতিতে কর্মীদের মাঝে হতাশা বেড়েছে। তাছাড়া, এতো বছর পরও কমিটি না হওয়ায় অনেক সিনিয়র নেতাদের বয়সও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। কেউ কেউ রাজনীতি থেকে দূরে চলে গেছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতের সরকার বিরোধী আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগকে চাঙ্গা করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্মার্ট নেতৃত্ব প্রয়োজন, তাই নতুন নেতৃত্ব এই ইউনিটে আব্যশিক বলে মনে করছেন কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী।
তারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সিনিয়র কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন করে কমিটি দিয়ে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করা দরকার। বর্তমান কমিটির কয়েকজন চাঁদাবাজি, মাদক, ইভিটিজিংসহ নারী কেলেঙ্কারীতে জড়িত।
তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের বার ভাংচুর করার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন কেন হয়নি জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই শাখার নতুন কমিটি নিয়ে কাজ করবেন বলে জানান।
কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ওই ঘটনা ব্যাক্তিগত কয়েকজনে করেছে। তাও আমরা জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য ব্যবস্থা নেবো।