ঢাবিতে ছাত্রলীগের হামলায় আখতারসহ ছাত্রশক্তির ১১ নেতাকর্মী আহত
আত্মপ্রকাশের পরপরই নতুন ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলায় জড়িত বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় সংগঠনটির আহবায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ ১১ জন নেতাকর্মীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় ডাকসুর সামনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামক এই নতুন ছাত্র সংগঠন। সংবাদ সম্মেলন ও র্যালি শেষ করে ফেরার পথে আনুমানিক বেলা ১টার পর টিএসসির পাশে পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনের রাস্তায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
সংগঠনটির প্রত্যক্ষদর্শী নেতাকর্মীরা জানান, র্যালি শেষ করে তারা কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দিকে যাচ্ছিলেন। বৃষ্টির কারণে কয়েকজন রিকশাতে উঠলে আহবায়ক আখতার হেটে যাচ্ছিলেন। তিনি পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে উপস্থিত হলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তার ওপর হামলা করে। তাকে মেরে রক্তাক্ত করে। এসম তারা আখতারকে উদ্ধার করতে আসলে তারাও কয়েকজন আহত হন।
এদিকে হামলাকারীরা ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী বলে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির একাধিক নেতাকর্মী। সংগঠনটির আহবায়ক আখতার হোসেন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এতে তিনিসহ মোট ১১ জন আহত হয়েছেন। প্রত্যেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসারত আছেন।
সংগঠনটির সদস্যসচিব নাহিদ হোসেন জানান, আমরা র্যালি পরবর্তী সময়ে টিএসসি থেকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দিকে যাচ্ছিলাম। আমাদের আহবায়ক আখতার হোসেনের সাথে যুগ্ম আহবায়কসহ কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন। যাওয়ার পথে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আখতার ভাইয়ের উপর হামলা করেছে। ওখানে তিন-চারজন নারী সদস্য ছিলো তারাও আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে যুগ্ম আহবায়ক লুৎফর রহমান ছিলেন, যুগ্ম আহবায়ক ফয়সাল হাসান ছিলেন, যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল গালিবসহ মোট এগারো জন আহত হয়েছেন।
সংগঠনটির যুগ্ম সদস্যসচিব নুসরাত তাবাচ্ছুম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জানান, আমাদের সংবাদ সম্মেলনটা মধুর ক্যান্টিনে করার কথা হলেও সেখানে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও তার অনুসারীরা অবস্থান নেয়। ফলে আমাদের ডাকসুর সামনেই সম্মেলন করতে হয়। সম্মেলন ও র্যালি শেষ করে আমরা টিএসসি হয়ে যখন আমরা ফিরছিলাম তখন পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের সামনে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক আখতার ভাইয়ের ওপর হামলা হয়। তিনি মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছেন। তিনি এখনো বমি করছেন।
তিনি আরও জানান, আমিসহ আমাদের তিন থেকে চার জন মেয়ে এবং মোট ১১ জন আহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হামলাকারীরা সবাই ছাত্রলীগের তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী। এর মধ্যে জসিমউদ্দিন হলের রাশেদুজ্জামান রনি নামে একজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি।
সংগঠনটির ঢাবি শাখার সদস্য আহত সাদিয়া ইয়ামিন ঐতিহ্য জানান, আখতার ভাই হেটে যাচ্ছিলো আমরা বৃষ্টির কারণে রিকশা নিয়েছিলাম। পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের সামনে আখতার ভাইয়ের ওপর হামলা হয়। আমরা ভাইকে বাঁচানোর চেষ্টা করি কিন্তু তারা আমাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। সেখানে কোনো মেয়ে ছিলো না। সেখানে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী জসিমউদ্দিন হল ছাত্রলীগের রনি নামে একজনকে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি।
হামলায় আহত সংগঠনের যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, আমরা সম্মেলনের পর পদযাত্রা শেষ করে টিএসসিতে কিছুক্ষণ অবস্থান করছিলাম। পরে দুপুরের খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ফিল্ডের (কেন্দ্রীয় মাঠ) দিকে যাচ্ছিলাম৷ ওখানে হঠাৎ করে ছাত্রলীগের একটি টীম এসেছে এলোপাথাড়ি হামলা করে। সেখানে আমি, আখতার ভাই এবং ফয়সাল (যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল হাসান) ভাই ছিলাম। ওদের লক্ষ্য ছিল মূলত আখতার ভাই। ওরা এসেই আখতার ভাইয়ের মুখে, নাকে ঘুষি মারা শুরু করে। আমরা ওনাকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হই। কিছুক্ষণের মধ্যে আনাদের সংগঠনের আরও কিছু সদস্য পেছন থেকে আসছিলেন। তারা রক্ষা করতে আসলে তাদের উপরও হামলা করা হয়। ওখানে ছাত্রলীগের আট-দশজন উপস্থিত ছিল।
তবে অভিযুক্ত জসীমউদ্দিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রনি ঘটনাটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় তিনি জড়িত নন জানিয়ে বলেন, মধুর ক্যান্টিন থেকে ১১টার পরই আমি হলে চলে আসি। পরে হামলার ঘটনা সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানতে পারি।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমিসহ আমার সকল নেতাকর্মী সকাল ১০টা থেকে মধুর ক্যান্টিনে অবস্থানরত ছিলাম। ওই সংগঠনটির আহ্বায়ক আখতার ২ দিন আগে আমার কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। আজকেও সহযোগিতা চেয়েছে। আমি আখতারকে বলেছি তুমি ডাকসুর সামনে সংবাদ সম্মেলনটা করো। সে সম্মেলন করেছে, মিছিল করেছে, কোথাও আমার নেতাকর্মীরা তাকে বাধা দেয়নি। যদি তাদেরকে মারতেই হতো, তাহলে তো আমরা তাকে সংবাদ সম্মেলনই করতে দিতাম না।
তিনি আরও বলেন, তারা কেন দোষারোপ করছে আমি জানি না। তবে যদি আসলেই তাদের ওপর কেউ হামলা করে থাকে, আমি অবশ্যই তার নিন্দা জানাই৷ এ ধরনের ঘটনাকে সমর্থন আমরা কখনোই দেই নাই। ওদেরকে মারার পেছনে আমাদের কোন রাজনৈতিক স্বার্থ নেই। বরং এদেরকে প্রতিষ্ঠা করলে রাজনৈতিক স্বার্থ আছে। ওরা নুরদের থেকে আলাদা হয়ে আসছে। আমাদের ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মী এর সাথে জড়িত না। আমরা তাদেরকে সাহায্য করেছি বলেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম করে গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়েছে। তবে আখতার ছাড়া কেউ গুরুতর আহত হয়নি।