শয়ন-সৈকতেই বন্দী ঢাবি ছাত্রলীগ, পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে?
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়। মাজহারুল কবির শয়ন ও তানভীর হাসান সৈকতের নেতৃত্বে সেই কমিটির মেয়াদ ৯ মাস পার হলেও এখনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি শাখা ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের এক নাম্বার ইউনিট খ্যাত এই ইউনিটটি বর্তমানে দুই নেতা দিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারায় সমালোচনা তৈরি হয়েছে। ক্ষোভ বিরাজ করছে পদপ্রত্যাশী ও কর্মীদের মধ্যে। এজন্য কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাদের সমন্বয়হীনতা এবং সম্প্রতি সাত কলেজ ইস্যুর দ্বন্দ্বকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাংগঠনিক জেলার মর্যাদা পায়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর’। সেই হিসেবে চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর শেষ হবে শয়ন-সৈকতের নেতৃত্বে বর্তমান কমিটির মেয়াদ। মেয়াদ শেষ হতে আর ৩ মাস বাকি আছে মাত্র।
ছাত্রলীগের শীর্ষ চার নেতা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে দ্রুত কমিটি ঘোষণা করবে বলে জানালেও তা বাস্তবায়ন করেনি। রেওয়াজ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণার পর ঢাবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গত ১৩ জুলাই ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণার আড়াই মাস পার হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি শাখা ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়। গত ৩ মাস আগে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য নির্দেশনা দিলে তখন মৌখিক নির্দেশনায় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সিভি (জীবনবৃত্তান্ত) নেয় ঢাবি ছাত্রলীগ। কিন্তু উদ্যোগ সেখানেই শেষ।
কমিটি দেরি হওয়ার পেছনে ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনুসারীদের পদায়নের রেওয়াজ রয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নূন্যতম ৩০ জন অনুসারী ঢাবি ছাত্রলীগের কমিটিতে আসবে। এসব বিষয়ে কেন্দ্র এবং ঢাবি সমন্বয় না হওয়ায় এখনো ঝুলে আছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এছাড়া সম্প্রতি সাত কলেজ ইস্যুতে কেন্দ্র এবং ঢাবি মুখোমুখি হওয়ার পর বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য কেউই আলোচনা করছেনা।
পদপ্রত্যাশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সামনে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাদের চাপ রয়েছে। সামনে কঠিন সময় আসছে। কিন্তু ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা সে বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেনা। ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, শাখা ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিকল্প নেই।
পদপ্রত্যাশী এক ছাত্রলীগ নেতা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এখন অনেকেই রাজনীতি করছেন। কিন্তু কমিটি বিলম্বিত হওয়ায় অনেকে ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা। যারা রাজনীতি করে সবাই তো পদ পাবেনা। যারা পদ পাবেনা তারা ক্যারিয়ারের অন্যদিকে চিন্তা করবে এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে বিতর্কিতরাও পদ পাওয়ার দৌঁড়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর, নিজ সংগঠনের কর্মীদের সাথে মারামারি, আবাসিক হলে গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়েছেন অনেকেই। যারা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে রাজনীতি করছেন। তবে ঢাবি ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, বিতর্কিতদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদায়নের সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা কমিটি তৈরি করেছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত হওয়ার পর তিনি অনুমতি দিলে আমরা কমিটি ঘোষণা করবো। তবে কবে নাগাদ হবে এমন কোনো তারিখ দেননি।
এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সাংগঠনিক নির্দেশনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তাদেরও প্রত্যাশা দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করতে পারবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের সাংগঠনিক নির্দেশনা রয়েছে, সে অনুযায়ী ঢাবি ছাত্রলীগ কাজ করছে, আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়ে যাবে।
কেন্দ্রের সাথে সমন্বয়হীনতা কমিটি গঠনের বিলম্বিত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন।
আর সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তারা কমিটি নিয়ে কাজ করছে। সমন্বয়হীনতার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সমন্বয়হীনতা নেই বলে মন্তব্য করেন। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিলে আমরা অনুমোদন দিয়ে দিবো।