ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকায় তীব্র সমালোচনা
ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধরের ঘটনায় এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। একই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় শাখা ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়ন। কিন্তু আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি সংগঠনটি। এতে সংগঠন এর জায়গা থেকে প্রতিবাদ না করায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে।
যদিও আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ডিএমপি রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ সাময়িক বহিষ্কার এর প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
এর আগে গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঘটনার বিচার দাবি করেছেন বলে জানান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। আজও ছাত্রলীগের শীর্ষ ২ নেতা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের দেখা করে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
কিন্তু নির্বাহী সংসদের ৩ জন প্রভাবশালী নেতা নির্মভাবে মারধরের শিকার হওয়ার পর ও সংগঠনের জায়গা থেকে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ না জানানোয় কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ছাত্রলীগ নেতাদের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কটাক্ষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন। অন্য একটি পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসার বিষয়ে লিখছেন। এদের মধ্যে অনেকে শীর্ষ ২ নেতা সাদ্দাম-ইনানের অনুসারী রয়েছেন।
পুলিশের মারধরের শিকার ছাত্রলীগের তিন নেতা হলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।
গুরুতর আহত আনোয়ার হোসেন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অন্যরা চিকিৎসা নিয়ে শনিবারই হলে ফিরে গেছেন।
ফেসবুকে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে ইঙ্গিত করে ছাত্রলীগের সাবেক সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক আহমেদ মুনীর তাইফ ফেসবুকে লিখেন, ‘‘রাজনৈতিক সমস্যা কূটনৈতিকভাবে সমাধান করাই শ্রেয় বলে মনে করেন অতি বিচক্ষণরা এবং তাই হয়ত করছেন! অনেক সময় ধ্বজভঙ্গে আক্রান্ত পুরুষও এই নীতি অনুসরণ করেন! তাতে চুপেচাপে গিন্নির হাতে পায়ে ধরে বিবাহ টেকানো গেলেও পাশের বাড়ির মিন্টু প্রাণীটির জন্যে যে ভাদ্রমাস উপহার দিলেন না তার নিশ্চয়তা কী? হয়তো লোকদেখানোর একটা অর্ডার আসবে, লোকদেখানো কিছু গান গল্প তৈরি হবে! যাতে সাংগঠনিক শক্তি মোটেও পুনরুজ্জীবিত হবে না, যা আপনাদের নীরবতার মধ্যে দিয়ে খসে পড়ল!
লোক দেখানোর জন্যে হলেও ২/৪ ঘন্টা অচল থাকতে পারত শাহবাগ, লোকদেখানোর জন্যে হলেও অবরুদ্ধ থাকতে পারত থানা এলাকা! কর্মীর তো অভাভ নেই! আপনারা বাথরুমে গেলে যে পরিমাণ কর্মী টিস্যু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তার অর্ধেক হলেও ঢাকা অচল হয়ে যেত! কর্মীরা আত্মবিশ্বাস, অভিভাবকত্বের স্বাদ পেত! এভাবে কর্মীদের আত্মবিশ্বাস দুর্বল করে দেওয়া মোটেই রাজনৈতিক আচরণ না!’’
সাবেক ছাত্রলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক বেনজীর নিশি ফেসবুকে লিখেন, ‘‘সুন্দর বক্তৃতা দিয়ে মঞ্চ কাঁপানো যায় মাঠ না! মাঠ কাঁপাতে হলে কর্মী বান্ধব হওয়া চাই!মেরুদণ্ডহীন! লজ্জা।”
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরাও ফেসবুকে কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে গতকাল ফেসবুকে প্রথম পোস্টটি দেন মাস্টারদা সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুন্সি রাকিব হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
রাকিব ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ‘হারুন-টারুন কিছুই না। যেদিন থেকে ফুল, পাখি, গান, জারুল হওয়া শুরু করেছে, সেদিন থেকে ছাত্রলীগ লাল সুতায় ঝুলে গেছে। আর এর সঙ্গে নতুন সুর যোগ হইছে আবার আহ্হা, উহ্হু।’
রাকিব আরও লিখেছেন, ‘আমরা সেই ছাত্রলীগ ফিরে পেতে চাই, যে ছাত্রলীগের একজন কর্মীর জয় বাংলা স্লোগানে প্রকম্পিত হতো রাজপথ। আমরা এই ফুল, ফল, জারুল অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর কোনো বিবৃতি দেননি। তবে তাঁরা পুলিশি নির্যাতনে আহত কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ারকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন।
আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার পদক্ষেপকে সঠিক মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ।
সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান অনুসারী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সজিবুর রহমান সজীব ফেসবুকে লিখেন, ‘গত দুদিন অনেক কিছু দেখলাম। সাদ্দাম-ইনানের নেতৃত্বে বর্তমান ছাত্রলীগ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়নি, রাজু ভাস্কর্যে আন্দোলনের ডাক দেয়নি। হ্যান, ত্যান কত কিছু। বিশেষ করে বর্তমান কমিটিকে কাজে লাগিয়ে যারা নিজেদের বিভিন্ন উদ্দেশ্য হাসিল করতে ব্যর্থ তাড়াই দেখলাম গর্জে উঠেছে। বিশেষ করে শ্রদ্ধাভাজন সাবেকদের আবেগ মনে হয় একটু বেশিই! ছাত্রলীগ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বাসী না, কাজে বিশ্বাসী। সাদ্দাম- ইনান পরিষদ আরও অনেক কিছু ছাপিয়ে যাবে। শুধু দেখে যান...’’
কেন্দ্রের ভূমিকার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা নিয়ে বক্তব্য জানতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী আসিফের মুঠোফোনে একাধিক কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। গতকাল থেকে তাঁরা ফোন ধরছেন না।
টিএসসিতে মানববন্ধন
এদিকে ছাত্রলীগের দুই নেতার ওপর নির্যাতনকারী এডিসি হারুন বরখাস্ত ও গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ দুপুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন হয়েছে।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা’ ও ‘গাজীপুর জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি’ ব্যানারে আয়োজিত এই মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক কিছু নেতাও অংশ নেন।
সাবেক এই নেতাদের মধ্যে আছেন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা তানজীল ভুইয়া তানভীর, সোহান খান, শাকিল আহমেদ, সৈয়দ আরিফ হোসেন, হাসিব মীর প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মী—কাউকেই ছাড় দেননি এডিসি হারুন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও তিনি হামলা করেন। এডিসি হারুন মানসিক বিকারগ্রস্ত একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
ব্যক্তিগত বিষয়কে কেন্দ্র করে গত শনিবার রাতে ছাত্রলীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে বেদম পেটান ডিএমপি রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ।