১৮ আগস্ট ২০২৩, ১৯:২৯

সরকারদলীয় প্রোগ্রামে যেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হচ্ছে: আনু মুহাম্মদ

  © ফাইল ছবি

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন মানুষের গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই এই সরকারের মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং এই সরকার মেয়াদোত্তীর্ণ সরকার বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ।  

আজ শুক্রবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগসহ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ছাত্র জনতার সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা। 

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশে খুবই অচলাবস্থা বিরাজ করছে। আমরা কিছুদিন আগেও যেই চাল ৩৫ টাকায় কিনেছি সেই চাল এখন ৫৩ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যেই মুরগী ১১০-২০ টাকায় কিনেছিলাম সেটা এখন প্রায় ২০০ টাকা। মানুষ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো কিন্তু সেটা এখন নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে যা ছিলো সেটাও নির্মূল করা হয়েছে। এখন ডিজিটাল আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন বানিয়েছে। এই সরকার মানুষকে বোকা পেয়ে ইচ্ছেমতো খেলে যাচ্ছে। মানুষ স্বাধীন হয় সাম্রাজ্যবাদীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে কিন্তু আমাদের নির্বাচন হচ্ছে তাদেরকে ডেকে আনার জন্য। 

বক্তারা আরও বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে দেশে একদলীয় নির্বাচন সম্ভব না। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। যেই সংবিধান জনগণ বিরোধী, পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলো যা এই সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করে নিজের মত করে সাজিয়ে এখন বলছে আমরা সংবিধান বিরোধী কাজে লিপ্ত। 

সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশের সকল মানুষ এখন ভয়ের মধ্যে বসবাস করছে। কারণ শুধু কথা বলার জন্য তার উপর নির্যাতন নেমে আসতে পারে। আজকে শ্রমজীবী মানুষ ফুটপাতে দোকান দিলে তাকে চাঁদা দিতে হয়, রিক্সা চালককে পুলিশের কাছে হয়রানি হতে হয়, শ্রমিকের আয় কমে গেছে। আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের সরকারদলীয় প্রোগ্রাম করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদেরকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। 

তিনি বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে- আমার ভোট আমি দিবো, যাকে খুশি তাকে দিবো; স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক - এই দুইটি স্লোগানের ভিত্তিতে আন্দোলন হয়েছিলো কিন্তু এখনো সেই দুটি দাবি পূর্ণ হয়নি। এখনো এই দুইটি স্লোগান জাতীয় স্লোগান হিসেবে আন্দোলনের মূল হিসেবে পরিগনিত হয়েছে। ৯৬ সালের পরবর্তীতে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হলেও সেই একই সরকার ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল বাতিল করে। সুতরাং এখন আমাদেএ একটা কাজই করতে হবে সেটা হলো এই গণবিরোধী সরকারকে পদত্যাগ করাতে হবে অন্যথায় দেশকে কখনোই পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়।

অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশের সকল মেগা প্রজেক্ট বিদেশীদের খুশি করতেই করা হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের দরকার না থাকলেও রাশিয়াকে খুশি করতে ঋণ করে পরিচালনা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু জাপানকে খুশি করতে, রামপাল চীনকে খুশি করতে তৈরী করা হচ্ছে। অথচ সরকার বলে তিনি কোন বিদেশীদের কথায় চলবেন না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তারা দেশের মানুষের ক্ষতি করেই যাচ্ছে যা অন্য কোনো সরকার করতে পারেনি। সরকার বলছে তারা দেশকে পাকিস্তান মডেল থেকে বের করতে চেষ্টা করছে কিন্তু দেশ এখনও পাকিস্তান মডেলেই চলছে।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার বলেন, বর্তমান পাঠ্যপুস্তক ভুলে ভরা আবার সেটা নিম্নমানের। যার ফলে ৬০ লাখ বই প্রেসেই পুড়িয়ে ফেলতে হয়েছে। স্কুল-কলেজের বইগুলোতে সরকার দলীয়দের গুণগান লেখা হয়েছে, ইতিহাস বিতর্কিত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার বিরোধী দল ও মতের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে রাতের ভোটে, এমনকি বিনা ভোটেও নির্বাচিত হয়েছে। বর্তমানে মানুষের ভোটাধিকার নেই। জনগণের ভোটের অধিকার নেই বলেই আমরা এই সরকারের পদত্যাগের দাবি করছি। 

তিনি আরও বলেন, ইডেন কলেজে নারী নির্যাতন করা হচ্ছে  বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমে টর্চার সেল করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের গণরুম গেস্টরুমে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা এসব থেকে মুক্তি পেতে চাইলে অবশ্যই এই সরকারকে পদত্যাগ করাতে হবে। নাহলে আমরা গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট গঠন করতে পারবো না। আগামী দিনের লড়াইয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে তাকে টেনে-হিচড়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, এই সরকারকে পদত্যাগ করাতে হলে ছাত্র, কৃষক শ্রমিককের মেলবন্ধন। আমরা আশির দশকে স্বৈরাচারকে পদত্যাগ করিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার নিয়ে আসলাম তাহলে কেন আমাদের আবার এই আন্দোলন করতে হচ্ছে? এই সরকার আবার নির্বাচিত হলে দেশে গণতন্ত্রের ছিটাফোঁটাও থাকবে না, শেখ হাসিনা শুধু মাফিয়াদের নিয়ে দেশ চালাবেন। তারা লক্ষ মানুষের সামনে হাসিমুখে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে। দালালদের চীন ভারত পাঠানো হয় কিন্তু আমরা বলতে চাই, এবার আপনাদের বিদায় নিতে হবে। আশির দশকের আন্দোলনে সবচেয়ে কম ভূমিকা ছিলো ছাত্রলীগের। সেখানে বাম দলগুলো ছিলো সম্মুখ সারিতে। কিন্তু এখিন আপনারা আমাদের হল থেকে বের করে দিয়ে নিজেরা হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। 

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র জনতার সমাবেশে নয়া মোর্চার সমন্বয়ক জাফর, উদীচীর সহ-সভাপতি জামশেদ আনোয়ার তপন, বিবর্তন সাংস্কৃতিক সংসদের মফিজুর রহমান মন্টু, বাসদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, ছাত্র জোটের সভাপতি মিতু সরকার, শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আ ক ম জহিরুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা বক্তব্য প্রদান করেন।