সভাপতির মুক্তিসহ তিন দাবিতে ছাত্র অধিকারের মশাল মিছিল
নিরাপদ ক্যাম্পাস, ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মসূচিতে হামলা এবং কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লার মুক্তির দাবিতে মশাল মিছিল করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।
রবিবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে এসব দাবি জানানো হয়। সমাবেশ শেষে মশাল জ্বাজ্বালিয়ে মিছিল করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
মিছিলে 'মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, ইয়ামিন ভাইয়ের মুক্তি চাই; হামলা দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না, মামলা করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না, শিক্ষা সন্ত্রাস, একসাথে চলে না, আমাদের দাবি একটাই, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই' ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের যুগে বাংলাদেশে আজ সাম্য, সামাজিক মর্যাদা ও সুবিচার নাই। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেমন কোনোকিছু না জানিয়ে ডাকাতীয় কাদায় ধরে নিয়ে যেতো একইভাবে বিন ইয়ামিন মোল্লাকে গভীর রাতে আটক করা হয়েছে। খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা আমাদের স্বাভাবিক চাহিদা, মৌলিক অধিকার হচ্ছে সভা- সমাবেশ করার অধিকার। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার ডিজিটাল আইন নামক কালো আইন দিয়ে আমাদের মৌলিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, এই সরকার; বিরোধী দলের কেউ প্রোগ্রাম করতে চাইলে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে , আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। ছাত্রলীগের কাছে এই ক্যাম্পাসকে ইজারা দেয়া হয়নি। ক্যাম্পাস তাদের জমিদারি নয় যে তারা আমাদেরকে প্রোগ্রাম করতে দেবে না। আমরা আমাদের সংবিধান স্বীকৃত অধিকার আদায় করবো।
সমাবেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, ' পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেমন বিনা ওয়ারেন্টে বাংলার নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করতো ঠিক একইভাবে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে নূরুল হক নূরের বাসা থেকে ঢাকাতদের মত ডিবি পুলিশ পাঠিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা দ্রুত তার মুক্তির দাবি জানাই।
তিনি আরও বলেন, সরকারের আমলে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আর্থিক অভাবের সুযোগ নিয়ে হলে হলে গেস্টরুমের নামে নির্যাতন করা হয়। শিক্ষার্থীদের জোর করে বিভিন্ন সভা সমাবেশে যেতে বাধ্য করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটি ক্রান্তিলগ্নে জাতিকে পথ দেখিয়েছে, তাই এর শিক্ষার্থীদেরকেই জেগে উঠতে হবে।
নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি জানি না আমি পরবর্তী কোন প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকতে পারবো কি-না! আমাকে দীর্ঘদিন ধরেই ডিবি পুলিশের মাধ্যমে হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমাকে ছাত্র অধিকার পরিষদ ছাড়তে বলছে নাহলে আমাকেও না-কি তারা বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাবে। তবে আমি এসব হুমকিকে ভয় পাই না। নিরাপদ ক্যাম্পাস ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে আমরা জীবন দিতেও প্রস্তুত রয়েছি।
এসময় তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের সমাবেশে হামলায় জড়িতদের শাস্তি ও বিন ইয়ামিন মোল্লার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। অন্যথায় সকল ছাত্র সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে ৫ দফা দাবিতে বৃহত্তর ছাত্র ঐক্য গঠন করে ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসমুক্ত করা হবে, দেশের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা হবে এবং দেশের গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকেলে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে ঢাবির টিএসসি আসলে তার উপরে হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে নুর সহ অন্তত ১১ নেতাকর্মী আহত হন। একই দিন রাত ২টার দিকে হাতিরঝিলের মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় নুরের বাসায় ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে গ্রেফতার করে।