১৮ জুলাই ২০২৩, ২০:২৩

এক যুগেও শেষ হচ্ছে না অপেক্ষার প্রহর

বশেমুরবিপ্রবি ও ছাত্রলীগের লোগো  © টিডিসি ছবি

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ হাতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ছাত্রলীগ। বর্তমানে এটি দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। সংগঠনটির গতিশীলতা বৃদ্ধিতে দেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই কমিটি রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁর নিজ জেলা গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)।

২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই সক্রিয়ভাবে রাজনীতি শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগ কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানে, আর্থিক সহযোগিতা প্রদানে এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের প্রতিটি আন্দোলন কর্মসূচিতেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকা এসব শিক্ষার্থীদের। পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ঘোষিত সকল কর্মসূচিই যথাযথভাবে পালন করেন তারা। তবে এতকিছুর পরেও দীর্ঘ একযুগে ছাত্রলীগের এই ইউনিটটির মেলেনি কোনো সাংগঠনিক স্বীকৃতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এর আগে ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখাকে সাংগঠনিক ভাবে গতিশীল করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ কর্তৃক প্রেরিত প্রতিনিধি দলের নিকট আগ্রহী প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। ওই সময়ে সকলে কিছুটা আশার আলো দেখলেও শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রলীগ কমিটি।

এমনকি এর পরবর্তী সময়েও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ একাধিকবার আশ্বাস দিলেও কমিটির ব্যাপারে কোনো সুরাহা হয়নি। ফলাফল স্বরূপ কমিটির আশায় দিন গুনে কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন, কেউবা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমনকি একসময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা অনেকেই হতাশা নিয়ে প্রবেশ করেছেন কর্মজীবনে। তবে এত হতাশার ভিড়ে এখনো কেউ কেউ প্রত্যাশা রাখছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি হবে। 

এমন পরিস্থিতিতে সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) ছাত্রলীগের কমিটির জন্য জীবনবৃত্তান্ত আহবান করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ছাত্র সমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করার জন্য নতুন কমিটি গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। উক্ত কমিটিতে পদ-প্রত্যাশীদের আগামী সাত (৭) দিনের মধ্যে ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এ দলীয় কার্যালয়ে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।

জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়ার পরও পার হয়ে গেছে তিন মাস। কিন্তু বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রলীগের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়নি। শাখা ছাত্রলীগের কর্মী জানান, দেশের সবচেয়ে অবহেলিত ছাত্রলীগ কর্মী আমরা। বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে বছরের পর বছর রাজনীতি করছি কিন্তু আমাদের মূল্যায়ন নেই। একটা কমিটি মানেতো শুধু পদ পাওয় নয় একটা কমিটি মানে স্বীকৃতি, সম্মান। রাজনীতি করে আমরা অর্থবিত্ত চাইনা কিন্তু আমাদের পরিশ্রমের স্বীকৃতিটুকু নেই।

ছাত্রলীগ কর্মীরা আরও জানান, গত সমাজের ন্যায় এবারো যদি কথা দিয়ে কথা না রাখা হয় তাহলে বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রলীগ পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়বে। হাজারো নিবেদিত কর্মী নিজেদের গুটিয়ে নিবে। তাই কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ, একটা সম্ভাবনাময়ী ইউনিটকে এভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবেন না। 

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী ও বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী বাবুল সিকদার বাবু বলেন, কমিটি নিয়ে আমি আশাবাদী। খুব শিগগির বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা হবে।

আরেক সভাপতি পদপ্রত্যাশী ও বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সম্রাট বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার কারণে তৃণমুলের কর্মীদের মাঝে রাজনীতির প্রতি অনীহা যেমন তৈরি হয়েছে তেমনি নীরবে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি সংগঠিত হয়েছে ক্যাম্পাসে। যার প্রমাণস্বরূপ আপনারা দেখেছেন কিছুদিন আগে নাশকতার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় শিবির কর্মীকে গোপালগঞ্জ শহর থেকে আটক করা হয়েছে। তাই আমাদের প্রত্যাশা শুধুমাত্র জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও শেখ সেলিম চাচার  নির্দেশনার আলোকে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অনতিবিলম্বে তাদের প্রতিশ্রুত, জাতির পিতার নামাঙ্কিত এই বিদ্যাপীঠে সকল বাধা অতিক্রম করে গঠনতন্ত্র মোতাবেক শিক্ষিত, ক্লিন ইমেজধারী ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব উপহার দিবেন।

বশেমুরবিপ্রবি কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে তাদের কোন মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।