ছাত্রলীগের কমিটিতে ৭৫ শতাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসার সাড়ে ৬ মাস পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হলেও তা নিয়ে বির্তক দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এই কমিটি ঘোষণার পরপরই তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
এই কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মীদের ভালো পদে পদায়ন, বিতর্কিতদের ঠাঁই দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও অঞ্চলপ্রীতিসহ নানান অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে পদবঞ্চিতদের।
তবে সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলছেন, প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক কমিটি গঠন এই প্রশ্নটি ছাত্রলীগের জন্য একেবারে অপ্রযোজ্য। তাই কমিটিতে কে কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এটা আমাদের কাছে বড় বিষয় নয়।
সাদ্দাম ও ইনান
সদ্য ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির ৩০১ জনের মধ্যে প্রায় ২২৬ জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী। শতকরা ৭৫ শতাংশ এই একটি ইউনিটেরই নেতা। বাকি ইউনিটগুলো থেকে পদায়ন হয়েছে বাকি ২৫ শতাংশ নেতা। এতে ছাত্রলীগের অন্য ইউনিটগুলোকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল কলেজ থেকে মাত্র একজন করে পদ পেয়েছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজ থেকে পদ পেয়েছেন ৬ জন করে। ইডেন কলেজ থেকে পদ পেয়েছেন ৫ জন। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে কেউ পদ পায়নি।
রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা এ মূল্যায়নে বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এতে তাদেরকে অপমানিত ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। অনেক ভালো মূল্যায়ন পাওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছেন তারা। তারা বলছেন, এই ইউনিটে শিবিরের চোখ রাঙানো উপেক্ষা করে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে টিকে থাকতে হয়। এখানকার নেতাকর্মীরা ত্যাগের রাজনীতি করে থাকে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে তারা ছাত্রলীগের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে মাত্র একজন পদ দিয়ে এই ইউনিটকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে গুরুত্বহীন রাবির নেতাকর্মীরা
রাবি ছাত্রলীগ নেতা তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয় বলেন, যে ইউনিটে ৭ বছরে নতুন কমিটি হয় না, সে ইউনিট থেকে কীভাবে কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার মতো নেতৃত্ব তৈরি হবে। মেরুদণ্ড ও কর্মীহীন অবহেলিত ইউনিট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রে যারা পদ পাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি ও রাজনীতি করছে তাদের মধ্যে শুধু রুবেল ভাই সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ পাওয়ার যোগ্য, আর বাকি সব হলের নেতা। তাহলে কাকে কেন্দ্রে পদ দিবে? কিবরিয়া ভাইকে (সভাপতি) না কি রুনু ভাইকে (সম্পাদক)? তারাতো ৭ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেনই।
ঢাকার বাইরে ও ঢাকা কেন্দ্রিক কমিটি গঠন এই প্রশ্নটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্য একেবারে অপ্রযোজ্য। কারণ, আমিই তো ঢাকার নই। আমার বাড়ি ঝালকাঠি, সংগঠনের সভাপতির বাড়ি পঞ্চগড়। আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি সারা বাংলাদেশের ৬৪ জেলা তথা ৫৬ হাজার বর্গমাইলে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া এবং সুন্দরবন থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত মানুষের প্রতিনিধিত্ব। সেখানে কে কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এটা আমাদের কাছে বড় বিষয় নয়-শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদবঞ্চিত মাহমুদুল হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, অনেক পরিশ্রম এবং ধৈর্য নিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে চেয়েছি। মাইম্যান রাজনীতির কারণে আমাকে বাদ পড়তে হয়েছে। আমি আজ স্বীকার করলাম আমার রাজনৈতিক প্যাটার্ন ভুল। আমাকে যারা ভালোবাসেন তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। রাজনৈতিক কারণে যারা ভালোবাসেন তাদের কাছে আরও বেশি ক্ষমা চাই। হল রাজনীতি, বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি, ডাকসু, সেন্ট্রাল রাজনীতি করেছি। যেভাবে শূন্য হাতে শুরু করেছিলাম সেভাবেই বিদায় দিল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ যা চায় তা-ই হয়।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য লিখেছেন, সম্পাদক পদের ৮টি এবং সহ-সভাপতি পদে ১০টি বাড়িয়ে কর্মীদের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছেন সাদ্দাম-ইনান। তবে কমিটি কিছুটা আঞ্চলিকতার দোষে দুষ্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে নিয়ে যে বিকেন্দ্রীকরণ করার কথা সেটা আশানুরূপ পরিলক্ষিত হয়নি।
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতদের বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিতর্কিতদের অপকর্মগুলো প্রমাণিত হলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে সেগুলোও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাবি কিংবা অন্য ইউনিটের নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, ঢাকার বাইরে ও ঢাকা কেন্দ্রিক কমিটি গঠন এই প্রশ্নটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্য একেবারে অপ্রযোজ্য। কারণ, আমিই তো ঢাকার নই। আমার বাড়ি ঝালকাঠি, সংগঠনের সভাপতির বাড়ি পঞ্চগড়। আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি সারা বাংলাদেশের ৬৪ জেলা তথা ৫৬ হাজার বর্গমাইলে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া এবং সুন্দরবন থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত মানুষের প্রতিনিধিত্ব। সেখানে কে কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এটা আমাদের কাছে বড় বিষয় নয়।
ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। ২০ ডিসেম্বর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরও নাম ঘোষণা করেছিলেন তিনি। তবে এই তিন কমিটি এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি।