১২ জুন ২০২৩, ১৬:২০

ছাত্রলীগের ‘দুই গ্রুপের বাগবিতণ্ডা’র ছবি ডিলিট না করায় ঢাবিতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শিবলী সাদিক  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। এসময় হলে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে তার স্থিরচিত্র (ছবি) ধারণ করেন ক্যাম্পাসে কর্মরত এক সংবাদকর্মী। পরে ঘটনার সেই ছবিগুলো ডিলিট না করায় তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে এ ঘটনা ঘটেছে।

পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শাখা ছাত্রলীগের হল ছাত্রলীগের নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক উপ-সম্পাদক শিবলী সাদিকের হাতে এমন হেনস্থার শিকার হয়েছেন অনলাইনভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘বিডি সমাচার ২৪’র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মুহাম্মদ ইমাম-উল-জান্নাহ।

অভিযুক্ত শিবলী সাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং ওই হলের ৬০৪ নম্বর রুমের শিক্ষার্থী। তিনি বরিশাল অঞ্চল থেকে ওই হলের ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ও ছাত্রলীগের কেদ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অন্যদিকে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাংবাদিক মুহাম্মদ ইমাম-উল-জান্নাহ আইন বিভাগের বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং একই হলের ৬০১ (ক) নাম্বার রুমের আবাসিক ছাত্র। 

জানা যায়, গতকাল রাত ১২টার দিকে হলের ৬৩৬ নম্বর রুমে সিট দখলকে কেন্দ্র করে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় খবর পেয়ে বিডি সমাচারের প্রতিবেদক জান্নাহ পেশাগত দায়িত্ব পালনে সেখানে উপস্থিত হয়ে ঘটনার ছবি তোলেন। পরে সংবাদ সংগ্রহ শেষে তিনি রুমে যান। এরপর একটার দিকে শিবলী সাদিকসহ আরও ২০-২৫ জন ছাত্রলীগের কর্মী রুমে এসে জান্নাহকে ধমকাতে থাকেন এবং ছবিগুলো ডিলিট করতে জোরাজুরি করেন। কিন্তু ছবিগুলো ডিলিট না করায় শিবলী জান্নাহকে জামার কলার ধরে রুমের বাইরে বের করে নিয়ে আসেন এবং হুমকি দিতে থাকেন। 

ভুক্তভোগী মুহাম্মদ ইমাম-উল-জান্নাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গতকাল রাত ১২টার দিকে হলের ৬৩৬ নাম্বার রুমে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ (বরিশাল) দুই গ্রুপের সিট দখলকে কেন্দ্র করে সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানতে পারি৷ এ ঘটনা শুনে আমি সেখানে গিয়ে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে আমার বন্ধুর রুমে (৬০৫) চলে আসি। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে হঠাৎ আমার বন্ধুর রুমে শিবলীসহ প্রায় ২০-২৫ জন নেতাকর্মী আসেন।

“তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। এসময় অন্যরা কেউ কিছু না বললেও বরিশাল অঞ্চলের ক্যান্ডিডেট শিবলী সাদিক আমার ফোনে থাকা ছবি ডিলিট করার জন্য আমাকে ধমকাতে থাকেন। কিন্তু এটি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হওয়ায় আমি ডিলিট করতে অপরাগতা প্রকাশ করি। এসময় শিবলী আমার জামার কলার ধরে বাইরে টেনে নিয়ে আসেন।”

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিক সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মামুন তুষার ভাইকে ফোনে জানিয়েছি এবং এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এসময় শিবলী আমার কাছে ক্ষমা চান। পরবর্তীতে হলের অন্যান্য নেতারা ঘটনাটি জানালেও তারা আমার সাথে কোন ধরনের কথা বলেননি। 

অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক উপ-সম্পাদক শিবলী সাদিক বলেন, গতকাল রাতে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। রাতে আমাদের নিজেদের মধ্যে একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আমরা সেটা নিজেরাই মিটিয়ে নিয়েছি। এসময় জান্নাহ এসে কিছু ছবি তুলে নিয়ে যায়।

“জান্নাহ আমার বন্ধু, আমরা একই সেশনের। সেহেতু তার গায়ে হাত তুলবো বা তাকে হেনস্থা করার কোন প্রশ্নই আসে না। এটা আমার বিরুদ্ধে একটা অপবাদ যে আমি তাকে কলার চেপে ধরে ছবি ডিলিট করতে বলেছি। আমি শুধু তাকে অনুরোধ করে বলেছিলাম, বন্ধু এটা আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল, তাই নিজেরা আলোচনা করেই মিটিয়ে নিয়েছি। এর বেশি কিছুই না।”

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি এ নামে আমার ক্যান্ডিডেট কাউকে চিনতে পারছি না। আমি নির্বাচনী প্রচারণার কাজে কয়েকদিন ধরে বরিশালে রয়েছি। আগামীকাল ঢাকায় ফিরে সে যে-ই হোক, একজন সাংবাদিকের কলার ধরে বাইরে বের করে হুমকি দেয়ার জন্য তাকে আমি অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবো।