২১ মে ২০২৩, ১১:৫০

সবাই থাকলেও ইবিতে নেই ছাত্রদল, নিষ্ক্রিয় সংগঠনিক কার্যক্রম

লোগো  © ফাইল ছবি

১১ বছর ৩ মাস পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন পর কমিটি হলেও শাখা সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান কোনো ধরনের কার্যক্রম দেখা যায়নি। সর্বশেষ গতবছরের ভর্তি পরীক্ষার সময় ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের ২ জন আহত হন। এরপর থকে প্রায় সকল দলীয় প্রোগ্রাম ক্যাম্পাসের প্রধান সংলগ্ন এবং আশেপাশে পালন করে সংগঠনটি। নিরাপত্তা ও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হামলার কারণে ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম করতে পারেন না বলে অভিযোগ তাদের। তবে ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগ কখনো হামলার রাজনীতি করে না। ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বড় ধরনের কোনো সংঘাত ও সংঘর্ষ ঘটেনি ক্যাম্পাসে। আগের মতো অস্ত্রের ঝনঝনানিও নেই। এখন পড়াশোনার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখছে। এসব সংগঠনের মধ্যে শুধু নেই ছাত্রদল। সংগঠনটি প্রায় ক্যাম্পাস ছাড়া।

সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের দাবি, সব হলেই কমিটি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। হল কমিটি দেওয়া শেষ হলে সাংগঠনিক গতিশীলতা ফিরবে বলে মনে করেন শাখা ছাত্রদলের নেতারা।

আরও পড়ুন: ভর্তিচ্ছুদের সহায়তায় এসে ঢাবিতে হামলার শিকার ছাত্রদল

ছাত্রদল নেই ক্যাম্পাসে
দীর্ঘদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সক্রিয় সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বিএনপির সহযোগী ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের। এ সময় ভর্তি নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ছাত্রদলের ক্যাম্পাসভিত্তিক সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে পরিচয় ঘটেনি। হল কমিটিও নেই বহুবছর। ফলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল সাংগঠনিকভাবে সংকটাপন্ন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা ও ছাত্রলীগের হামলার কারণে ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম করতে পারি না। কিন্তু আমরা ক্যাম্পাসের আশেপাশে কেন্দ্রের সকল প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করি।

হল কমিটি গঠনের নতুন উদ্যোগ
দীর্ঘ ১১ বছর পর নতুন কমিটি পেয়েছে ছাত্রদল। দীর্ঘসম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হল কমিটি না থাকায় ভাটা পড়েছে সাংগঠনিক কাজে। হলে কার্যক্রম না থাকায় নবীন শিক্ষার্থীরাও পরিচয় হতে পারেনি ছাত্রদলের সঙ্গে। কমিটি হলে আরও গতিশীলতা ফিরবে বলে দাবি শাখা ছাত্রদল নেতাদর।

হামলার রাজীনিতিতে ছাত্রলীগ বিশ্বাসী নয়। যারা সংগঠনের আড়ালে মৌলাবদের চর্চা করে এবং ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়; সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করবে ছাত্রলীগ।

ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনের হামলা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। ক্যাম্পাসে অবাধে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলে সংগঠন আবার চাঙা হবে জানান তারা।

ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হমলার শিকার হতে হয়। ফলে দলীয়  প্রোগ্রাম ক্যাম্পাসের আশেপাশে বাস্তবায়ন করতে হয়।

সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই
সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৭ মার্চ ইবি শাখা ছাত্রদলের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে আইন বিভাগের ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষের ওমর ফারুককে সভাপতি ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের রাশেদুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।

আরও পড়ুন: 'ছাত্রলীগ ভীতি': ২ বছর ধরে ক্যাম্পাস ছাড়া চবি ছাত্রদল

প্রায় দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০২১ সালের ১৬ জুন সর্বশেষ কমিটিতে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের সাহেদ আহম্মেদকে আহ্বায়ক এবং ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মাসুদ রুমী মিথুনকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্যা বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু সাংগঠনিক কার্যক্রম আগের মতোই ভঙ্গুর ছাত্রদলের।

নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা ও ছাত্রলীগের হামলার কারণে ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম করতে পারি না। কিন্তু আমরা ক্যাম্পাসের আশেপাশে কেন্দ্রের সকল প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করি।

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, হামলার রাজীনিতিতে ছাত্রলীগ বিশ্বাসী নয়। যারা সংগঠনের আড়ালে মৌলাবদের চর্চা করে এবং ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়; সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করবে ছাত্রলীগ।

আর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাসুদ রুমী মিথুন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হমলার শিকার হতে হয়। ফলে দলীয়  প্রোগ্রাম ক্যাম্পাসের আশেপাশে বাস্তবায়ন করতে হয়। সকল ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরানোর দাবি জানাই।

ক্যাম্পাসের সব সংগঠন সুষ্ঠুভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতে। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে সকল প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন সুষ্ঠভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে যারা সংগঠনের আড়ালে মৌলবাদের রাজনীতি করে ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের প্রতিহত করবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।