প্রতিষ্ঠার এক দশক পরও কমিটিবিহীন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ

  © ফাইল ছবি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এক দশক পার হলেও কমিটির মুখ দেখেনি শাখা ছাত্রলীগ। অথচ পুরোটা সময় ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক সাংগঠনিক ইউনিট হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া সত্ত্বেও কমিটি না থাকায় ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে কর্মীদের মধ্যে। অন্যদিকে, কমিটি না থাকায় বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে কর্মীরা। ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি-হানাহানিও হয়েছে অনেকবার।

২০১২ সালের ১ জুলাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। আগামী জুলাই মাসে ১১ বছর পেরিয়ে ১২ বছরে পা দেবে এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘ সময় ধরে কোন কমিটি না থাকার কারণে শাখা ছাত্রলীগ সঠিক নেতৃত্ব পাচ্ছে না, এভাবে চলতে থাকলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ একসময় নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

তবে ২০১৯ সালের ১৭ জুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংক্ষিপ্ত এক সফরে এসেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। সে সময় তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ১১১তম সাংগঠনিক ইউনিট হবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে এমন আশার বাণী শুনলেও গঠন হয়নি কমিটি। 

কোনো এক অদৃশ্য কারণে কমিটি হয়না এমন গুঞ্জনও শোনা যায়। ফলে কমিটি গঠন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। সকলের মনেই প্রশ্ন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি কী হবে? তবে সকলেই আশাবাদী বর্তমান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাত ধরেই গঠন হবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। 

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন জানান, অগ্রাধিকারের উপর ভিত্তি করে ধাপে ধাপে ইউনিটগুলোর কমিটি দেওয়া হবে। সম্প্রতি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রেস রিলিসের মাধ্যমে সেটি জানিয়ে দিবো।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ সক্রিয়। বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ'র অনুসারী। অপরটি সদর আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী। তবে সাম্প্রতিককালে জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারীদের ক্যাম্পাসে তেমন একটা দেখা যায় না।

আবার, এসব অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে বিচ্ছিন্নতা। সময়ের বিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বও পরিবর্তন হয়েছে বহুবার। আবার বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি -হানাহানিও হয়েছে বহুবার।

তবে প্রতিবছর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করে আসছে ছাত্রলীগের ব্যানারে। এমনকি বিভিন্ন দলীয় প্রোগ্রামে অন্যান্য সাংগঠনিক ইউনিটের মতোই কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়। বর্তমানে এসব প্রোগ্রাম হচ্ছে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদ জামান নাভিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ফাত্তাহুর রাফি এবং ইংরেজি বিভাগের তামজিদ মঞ্জুসহ ছাত্রলীগ কর্মীদের নেতৃত্বে।

অন্যদিকে ছাত্রদল ও অন্য রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কমিটি রয়েছে কিন্তু সেগুলোর কার্যক্রম নিষ্ক্রিয়। অনেক সময় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কার্যক্রমও দেখা যায়।

সক্রিয় ও বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা ছাত্রলীগের কেনো হচ্ছেনা কমিটি! এ নিয়ে চলছে অনেকের মধ্যেই ধূম্রজাল। অনেকে বলছেন সামনে নির্বাচন। তাই, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্যে এখনই দরকার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। বিচ্ছিন্নতা ঠেকাতে ও ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকে সাংগঠনিক রূপ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মী জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোপালগঞ্জ) কমিটি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে জীবনবৃত্তান্ত চেয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। একই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার ছাত্রলীগ কমিটির। আর এটা এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

তারা আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে রাজনীতি করে আসছে। বিভিন্ন জাতীয় ও সাংগঠনিক প্রোগ্রামে তারা অংশগ্রহণ করছে। তাহলে কেনো এখনো কমিটি হচ্ছেনা! একটা বিভাগীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি নেই এটা বেশ দুঃখজনক। তারপরও আমরা আশায় বুক বেধে আছি, ইনশাআল্লাহ কমিটি হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা'র হাতকে শক্তিশালী করার জন্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরও কমিটির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।


সর্বশেষ সংবাদ