০১ মার্চ ২০২৩, ১১:০৭

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতের রায় আজ

হাইকোর্ট  © ফাইল ছবি

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি)  দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ছাত্রী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আদালতের রায় আজ। এর আগে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়া হলে এর উপর পর্যালোচনা দিয়ে আদালত গতকাল বলেছেন, এ ঘটনায় গাফিলতি ছিল হল প্রভোস্ট, হাউজ টিউটর ও প্রভোস্টেরও। 

এছাড়াও আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটিও বক্তব্য শুনেছেনি নির্যাতিত শিক্ষার্থীর। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হল ছাড়ার নির্দেশের পর তারা হল ছেড়ে গেছেন; আজকের রায়ে ব্যবস্থা আসবে তাদের বিরুদ্ধেও।

হাইকোর্টের নির্দেশে হল ছেড়ে যাওয়া ছাত্রীরা হলেন, শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি এবং ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের মাওয়াবিয়া

এ নিয়ে হলে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামছুল আলম বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই অন্তরা ও তাবাসসুম ওইদিন সন্ধ্যায় হল ত্যাগ করেন। পরে  হলের পক্ষ থেকে আবাসিকতা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানালে গতকাল দিনের বিভিন্ন সময়ে বাকিরা সবাই হল ছেড়েছে। আজ বুধবার বেলা ১২টার মধ্যে তাদের হল ত্যাগের নির্দেশনা ছিল।

হল ও প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার  সকালে হল ছাড়েন ছাত্রী নির্যাতনে অভিযুক্ত ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের মাওয়াবিয়া জাহান। হলের গণরুম প্রজাপতি-১ এ থাকতেন তিনি। বাবার সঙ্গেই তিনি ক্যাম্পাস ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। পরে দুপুরে নিজের মালপত্র গুছিয়ে হল ছাড়েন একই অভিযোগে অভিযুক্ত আইন বিভাগের একই সেশনের ইসরাত জাহান মীম। তারা উভয়ই ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী মেসে উঠেছেন বলে জানা গেছে৷ হল ছেড়েছেন ফাইন আর্টস বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের ছাত্রী হালিমা আকতার ঊর্মী। এই অভিযুক্তও ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী মেসে উঠেছেন বলে জানা গেছে। মীম ও ঊর্মী হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে ছিলেন।

এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হাইকোর্টের নির্দেশে হল ছাড়ে ছাত্রী নির্যাতনের 'মূলহোতা ও হুকুমদাতা' শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ওর তার কর্মী  ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম। অন্তরা হলের দক্ষিণ ব্লকের ৪০৮ নম্বর কক্ষে ও তাবাসসুম প্রজাপতি-২ তে (গণরুম) ছিলেন।

হল প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা সাপেক্ষে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) পাঁচ অভিযুক্তের আবাসিকতা ও দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল সংযুক্তি বাতিল করেন হল প্রভোস্ট। এসময় পহেলা মার্চ (বুধবার) বেলা ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই মঙ্গলবার দিনের বিভিন্ন সময়ে তারা হল ত্যাগ করেছেন।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত ওই কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ করেন।

অভিযোগে তিনি বলেন, র‌্যাগিংয়ের নামে ছাত্রলীগ নেত্রীরা তাকে ‘বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ’ করেন। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি ঘটনা কাউকে জানালে ‘জীবননাশের হুমকিও’ দেন তারা। রোববার রাতের ওই ঘটনার পর বিপর্যস্ত ওই ছাত্রী সকালে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান। মঙ্গলবার তিনি প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

এরপর ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং হল কর্তৃপক্ষ দুটি কমিটি গঠন করে। এর বাইরে হাইকোর্টের নির্দেশে একটি বিচার বিভাগীয় এবং ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আরও দুটি কমিটি করেছে।