১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:৩০

ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে মশাল মিছিল অধিকার পরিষদের 

ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল  © ফাইল ফটো

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

ছাত্র অধিকার পরিষদের মশাল মিছিলটি পল্টন মোড় থেকে শুরু হয়ে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

এসময় তাদের, শিক্ষা সন্ত্রাস, একসাথে চলে না; শিক্ষা ছাত্রলীগ,  একসাথে চলে না; ছাত্রলীগের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও; হৈ হৈ রৈ রৈ, ছাত্রলীগ গেলো কই? স্লোগান দিতে দেখা যায়।

সমাবেশে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, "কোটা  সংস্কার আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ থেকে ছাত্র অধিকার পরিষদের জন্ম। আমাদের মারধর করে হটাতে পারবেন না। বর্তমানে পাকিস্তান শাসন আমলে  আইয়ুব খানের  মতো হাসিনা সরকার স্বৈরাচার  সরকারে পরিণত হয়েছে৷ তার ছাত্রলীগ বাহিনী নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ক্যাম্পাসে কোনো দলকে প্রবেশ করতে দেয় না।

ছাত্রলীগের অপকর্ম স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, "গুম খুন সহ নানা অপকর্মের কারণে ছাত্রলীগ এখন নিয়মিত শিরোনামে। ইবিতে ছাত্রী হেনস্তা, চট্টগ্রাম নারী শিক্ষার্থীকে অপমান, রাবিতে হিন্দু শিক্ষার্থীকে শিবির বলে  টর্চার সহ ঢাবিতে নিয়মিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ডাকাতি, ট্রাক আটকে ছিনতাই, বই মেলায় ছিনতাই সহ বিভিন্ন অবস্থায় হাতেনাতে পুলিশের হাতে আটক হচ্ছে। তাই আইয়ুব খানের মতো ছাত্রলীগকে ক্যfম্পাসে ক্যfম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে ছাত্রদেরকেই।"

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, "আপনি যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিন। আপনি  ২০১৪ সালে, ২০১৮ সালে জাতির সাথে প্রতারণা করেছেন তাই আর ক্ষমতাসীন সরকারের  অধীনে নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। আপনারা আবার একদলীয় সরকার কায়েমের দুঃস্বপ্ন দেখছেন। আপনি জানেন না আইয়ুব খানকে যে শিক্ষা ছাত্রসমাজ  দিয়েছিলো, আপনাদেরকেও সেই শিক্ষা দেবে।

আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে তিনি বলেন, "আপনাদের জনপ্রিয়তা হিরো আলম দেখিয়েছে। আপনারা হিরো আলমকেও পারেননি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে হারাতে। আপনাদের কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিল। তাকেও ভোট জালিয়াতি করে কারসাজী করে হারিয়েছেন। আপনারা ২৮ বচর পর ডাকসু নির্বাচন দিয়েছিলেন, এত সুসময়েও আপনারা জিততে পারেননি। তাই আবার ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার সাহস করতে পারছেন না।"

ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘‘তারা (ছাত্রলীগ ) হামলা করে টিকে থাকতে চায়। আজ ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীর মুখোশ পড়ে হামলা করছে নিজেদের ব্যানার নিয়ে আসার সামর্থ্য তাদের নেই। ছাত্রলীগের নেতাদের তিনি বলেন, যদি প্রকৃত ছাত্রনেতা হয়ে থাকেন তাহলে নিজের পরিচয়ে মাঠে আসুন, নেতাকর্মীদের আমাদের উপর লেলিয়ে দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করবেন না। তিনি ছাত্রলীগের নেতাদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, নির্বাচনে আসুন, আমি চ্যালেঞ্জ করছি আপনারা ডাকসুতে জিতবেন না।"

তিনি আরো বলেন, "আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেকও কাটতে পারি না। আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করা হয়। সবাই ঢাবির শিক্ষার্থী, কিন্তু প্রশাসন কখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। ঢাবি প্রক্টর বলে অনেক কিছু আমাদের হাতে থাকে না তাহলে কেন তিনি প্রক্টরের চেয়ার দখল করে বসে আছেন?"

সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব, সাংগঠনিক সম্পাদক মোল্ল্যা রহমতুল্লাহ,  ঢাবি সভাপতি আসিফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান প্রমূখ। 

উল্লেখ্য, ছাত্র অধিকার পরিষদ তাদের ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটতে ঢাবির টিএসসিতে আসলে প্রথমে জনতা ব্যাংকের সামনে, পরে ডাচ চত্বরে তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় প্রায় ২৬ জন আহত হয়, যাদের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মাঝে কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়ামিন মোল্লা, আখতার হোসেন এবং কর্মী ইউনুস গুরুতর আহত বলে জানিয়েছে কর্তব্যরত চিকিৎসক।