ছাত্রলীগ সভাপতি পেটালেন মা’সহ শিক্ষার্থীকে, লাঞ্ছিত শিক্ষকও
শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও মাসহ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদের বিরুদ্ধে। জোরপূর্বক শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করে লাঞ্ছিত করেন তিনি। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ভেটেরিনারি অনুষদের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলামের কক্ষে।
সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আফরিনা মুস্তারিকেও লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ উঠেছে। মারধর করা হয় চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আফতাব দুর্বারকে।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযোগ করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে আফতাব বিভাগে পরীক্ষা দিতে আসেন। বের হওয়ার সময় তাঁকে মারধরের হুমকি দেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরীক্ষায় দায়িত্বরত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার মিল্টন বিভাগের অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলামের শরণাপন্ন হন। প্রক্টর ও ভেটেরিনারি অনুষদের ডিনকেও বিষয়টি জানান। পরে ঘটনাস্থলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন উপস্থিত হন। পরে পরীক্ষায় দায়িত্বরত শিক্ষকেরা চলে যান।
প্রক্টর ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেই খন্দকার তায়েফুর রিয়াদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী বিনা অনুমতিতে ড. পূর্বার কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও দূর্বারকে মারধর করে কক্ষ তছনছ করেন। ছাত্রকে রক্ষা করতে গেলে লাঞ্ছনার শিকার হন ড. পূর্বা ও সহকারী প্রক্টর আফরিনা মুস্তারি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। এর যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের শিক্ষকেরা।
জানা গেছে, আফতাব শাখা ছাত্রলীগের কমিটির নেতা ছিলেন। দলীয় কোন্দলের কারণে তার সঙ্গে রিয়াদের বিরোধ চলছে। সন্ধ্যায় রিয়াদ হঠাৎ অধ্যাপক পূর্বার কক্ষে প্রবেশ করে দুর্বারকে মারধর করেন। এ সময় শিক্ষার্থীর মাকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আফতাব দুর্বার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেওয়ার এটাই শেষ সুযোগ। তাই রাজনীতি ছেড়েছেন। পরীক্ষা দিতে এসে আগেও বেশ কয়েকবার হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এজন্য মাকে নিয়ে পরীক্ষাকক্ষে উপস্থিত হয়েছিলাম। পরীক্ষা শেষে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর আনাগোনা দেখে আমি শিক্ষকের কক্ষে অবস্থান করি। পরে ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াদ এসে আমাকেসহ আমার মা ও শিক্ষকদের মারধর করেছে। খালা-খালুকেও গালিগালাজ করার পাশাপাশি খালুকে মেরেছে। আমার ভুল থাকতে পারে, অনেকবার ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু তিনি মারধর করলেন।
আরো পড়ুন: চবি ছাত্রলীগ ও ছাত্র অধিকারের ১৮ নেতা-কর্মী বহিষ্কার
সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ধাক্কাধাক্কির সময় কাউকে রক্ষা করতে গেলে ধাক্কা লাগতেই পারে। কিন্তু ধাক্কা লাগাকে যদি বলা হয় মারধর, তাহলে দায়িত্ব পালন করা যাবে না। এটিকে ইস্যু বানানো হয়েছে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শিক্ষার্থীকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। শিক্ষকরা দুর্বারকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। তবে শিক্ষকদের কাউকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে কি না, জানা নেই।
প্রক্টর ড. মহির উদ্দীন বলেন, ছাত্রদের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আমার, তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। মারধরের ঘটনাটি সামনে ঘটেনি। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দু’জন সহকারী প্রক্টর উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ভালোভাবে জানেন বিষয়টি।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, আমাকে হেয় করার জন্য অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এগুলো সাজানো নাটক। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুর্বারকে বাঁচিয়েছি। সেখান থেকে বের হতে সাহায্য করেছি তাকে।