০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:৪৫

নির্দিষ্ট ফরম্যাটের চিঠিতে দু-তিনদিনের ছাত্রলীগ নেতা তারা

নির্দিষ্ট ফরম্যাটের চিঠিতে ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেয়েছেন অনেকে  © ফেসবুক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক হিসেবে পদ পেয়েছেন তানি তামান্না। গতকাল শুক্রবার পাওয়া চিঠির ছবি ফেসবুকে দিয়ে শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন হচ্ছে আজ। সে হিসেবে একদিনের জন্য কমিটিতে পদ পেয়েছেন রোকেয়া হলের ওই ছাত্রলীগ নেতা।

একইভাবে মারুফ হোসেন সহ-সভাপতি হয়েছেন। তিনি চিঠি পেয়েছেন একদিন আগে। সেই ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে শীর্ষ নেতাদের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। টি এম শুভ রহমানও একই পদ পেয়েছেন। 

শুধু ঢাবি শাখাই নয়, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে এভাবে পদ দেওয়া হয়েছে অনেককে। সদস্য, সম্পাদক বা অন্য পদ পেয়েছেন। তেমনি একজন এস এম আনোয়ার হোসেন। তিনি সহ-সম্পাদক পদ পেয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

উমর ফরহাদ ও নাজিবুল হোসেন পলাশ হয়েছেন সহ-সম্পাদক। একইভাবে শামীমা সীমা হয়েছেন সদস্য। তবে ছাত্রলীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক আইডিতে এসব পদ দেওয়ার বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। ঢাবি শাখা-ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের আইডিতেও কোন তথ্য মেলেনি।

মাত্র এক বা দু’দিন কিংবা এক সপ্তাহ আগে এভাবে পদ পেয়ে এসব নেতার নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা কতটা বিকশিত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগেও এ ধরনের ফরম্যাটে ছাত্রলীগের পদ দেওয়া নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেক নেতা।

কয়েকজনের পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব নেতারা পদ পেয়েছেন একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটের চিঠিতে। সেখানে সব লেখা কম্পোজ থাকলেও নেতার নাম ও পদবি কলমে লেখা। নিচে শীর্ষ দুই নেতার সিল ও স্বাক্ষর। সম্মেলনের আগের দুই সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ হল কমিটিও পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই সনজিত চন্দ্র দাসকে সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির মেয়াদ এক বছর। এর প্রায় ১০ মাস পর কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়। তারও প্রায় তিন বছর পর সম্মেলন হচ্ছে। এর মাত্র দু’দিন আগে পদ পেলেন বেশ কয়েকজন।

আরো পড়ুন: ঢাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন আজ, নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে যারা

২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত হতে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পান আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। গঠনতন্ত্র হিসেবে দুই বছর ধরলে তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি। মেয়াদ শেষের প্রায় ১১ মাস পর ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ৬ ডিসেম্বর হবে। ভারপ্রাপ্ত সময় ধরলে এ সময় আরও বেশি হবে। সম্মেলনের মাত্র সপ্তাহখানেক আগে কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা  রনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নতুন পদগুলোর বিষয়ে উপ-দপ্তর সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম খান শিমুল দেখছেন। পরে শিমুলকে ফোন দেওয়া হলে তা ব্যস্ত পাওয়া যায়।

ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শেষ মুহুর্তে এসব পদ দিয়ে ছাত্রলীগের কোনও লাভ হয় না। এগুলো ব্যক্তিগত কারণে দেওয়া হয়। এতে ভবিষ্যতে ছাত্রলীগে আরও বিচ্ছৃঙ্খলা সৃষ্টির পথ তৈরি করে দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগে কখনো এমন নির্দিষ্ট ফরম্যাটে কমিটি দিতে দেখা যায়নি। এভাবে পদ দেওয়ার বিষয়ে আগে থেকেই আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি।

এ বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান জয়কে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও ফোন ধরেননি।