নেতাকর্মীদের হাতে রক্তাক্ত কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজের ওপর হামলা চালিয়েছে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কুষ্টিয়া পৌর এলাকার পিটিআই সড়কে খালার বাড়িতে অবস্থানকালে তার উপর এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এসময় পুলিশের উপস্থিতিতেও প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাকর্মীরা তাকে বেধড়ক মারধর করেন। পরে পুলিশের গাড়িতে করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা না নিয়ে খালি গায়ে কয়েকজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর মুর্যালে যান ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক। এসময় তার সারা মুখ রক্তাক্ত ছিল এবং কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছিল।
দলীয় সূত্র জানায়, কয়েক মাস ধরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা, কুষ্টিয়া শহর ও সরকারি কলেজসহ পাঁচ ইউনিটের কমিটি গঠন নিয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা চলে আসছে। এর আগেও হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। দুই সপ্তাহ আগেও শেখ হাফিজের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সেই দফায় তিনি কৌশলে পালিয়ে রক্ষা পান।
আরও পড়ুন : ললিপপ হাতে জাবি শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষিকার সেলফি, ক্যাম্পাসে পোস্টারিং
জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে শেখ হাফিজ খাওয়ার জন্য পিটিআই রোডে তার খালায় বাসায় যান। খাওয়া-দাওয়া শেষে তিনি ওই বাসায় বসে গল্প করছিলেন। এ সময় শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হাসিব কোরাইশি, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তর, ছাত্রলীগ নেতা অভি, সজলসহ তাদের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন কর্মী ওই বাসায় গিয়ে তার খোঁজ করতে থাকেন। তখন ভয় পেয়ে ওই বাসার টয়লেটের ফলস ছাদে আশ্রয় নেন হাফিজ। প্রতিপক্ষের কর্মীরা সেখানে উঠে টেনে হিঁচড়ে তাকে নিচে নামিয়ে আনেন। এরপর লাঠি ও রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে সামনের সড়কে নিয়ে আসেন। ধারালো অস্ত্র দিয়েও তার মাথায় আঘাত করা হয়। এ সময় তারা ম্লোগান দিতে থাকেন।
পিটিআই রোডে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের বাসার সামনে নিয়ে এসে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে হাফিজকে মারধর করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবি ছাত্রলীগ কর্মীদের নিবৃত করেন।
পরে হাফিজকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন কর্মীরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য তাকে নেওয়া হলে চিকিৎসা না নিয়েই তিনি সেখান থেকে চলে আসেন।
বাড়ির মালিক এক নারী বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ দুপুরের দিকে আমাদের বাড়িতে আসেন। বাড়িতে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় বাইরে থেকে ছাত্রলীগের অনেক ছেলে-পেলে লাঠি সোটা হাতে বাসার মধ্যে ঢুকে পড়ে। পরে টয়লেটের ফলস ছাদে পালানো অবস্থায় তাকে মারতে মারতে নিয়ে যায়।’
গুরুতর আহত শেখ হাফিজ বলেন, ‘কমিটি গঠন নিয়ে মূলত বিরোধ তৈরি হয়েছে। আমি ঢাকায় ছিলাম। কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়া এসেছি। দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেকার অফিসে দেখা করতে যাই। সেখান থেকে বের হলে কয়েকজন যুবক আমাকে রেকি করতে থাকে। সেখান থেকে পিটিআই রোডে আমার খালার বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে আক্রমণ করে জেলা ও শহর ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী। আমার কী দোষ? আমি জামায়াত-ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি এটা কি আমার দোষ? তারা আমাকে বেদম মেরেছে। দল ক্ষমতায় থাকতে এই প্রতিদান পেলাম। আমি আমার নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ ভাইয়ের কাছে বিচার দিয়েছি। করোনাকালীন আমি ও আমার ছেলেরা মানুষের জন্য কাজ করে দলের কাছ থেকে এই প্রতিদান পেলাম। আমি বিচার চাই, বিচার চাই।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। বিস্তারিত জানি না।
জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা, গুটিকয়েক নেতা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রকশ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলা চালিয়েছে। এটা অবশ্যই দু:খজনক। কারা দলের মধ্যে ঢুকে এ সমস্ত কাজ করছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।