প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেও ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে হেলদোল নেই জয়-লেখকের
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে ছাত্রলীগ এবং অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর সম্মেলনের নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সেই নির্দেশনার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না ছাত্রলীগরে শীর্ষ দুই নেতার মধ্য। ফলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং পদপ্রত্যাশীদের মধ্য তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। নির্ধারিত সময়ের মধ্য সম্মেলন হবে কি না তা নিয়ে তারা অন্ধকারে।
নেতাদের অভিযোগ, নির্দেশনা অনুযায়ী কীভাবে সম্মেলন সফল করা যায় সেসব বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কোনও কিছুই করছে না কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। সম্মেলনের বিষয়ে সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
এর আগে গত শুক্রবার বিকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয় ২৪ ডিসেম্বর। এর আগে ছাত্রলীগসহ অন্যান্য মেয়াদ উত্তীর্ণ অঙ্গ সংগঠনগুলোর সম্মেলনের নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে রোববার দলটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আবারও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তবে ছাত্রলীগের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন নির্দেশনা আসলেও ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না। যদিও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, আমরা সম্মেলনের বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা আমাদের ফোন ধরেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা যদি ছাত্রলীগ না মানে, তবে এর দায়ভার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিতে হবে।
ছাত্রলীগ নেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ফোন দিলও তারা ফোন ধরেননি। এমনকি তাদরকে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তারা কোনও উত্তর দেননি।
আরো পড়ুন: ছাত্রলীগ সভাপতির ভাই গুলিবিদ্ধ
নিয়মানুযায়ী, কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা পেলে দপ্তর বিভাগ থেকে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। হাতে এক মাস ২০ দিন সময় থাকলও এখনো কোন নির্দেশনা পায়নি সংগঠনটির দপ্তর বিভাগ। ফলে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দশনা অনুযায়ী সম্মেলন করা নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্য রয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অন্য নেতারা।
এসব বিষয়ে কথা বলতে দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনিকে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। উপ-দপ্তর সম্পাদক ইমরান হাসান বলেন, সম্মেলনের বিষয়ে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে কোন কিছু বলেননি। সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হলেও আমাদেরকে যেভাবে বলা হবে সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নেব।
ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান বলেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে ২৪ ডিসেম্বরের আগে ছাত্রলীগের সম্মেলনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। তবে সম্মেলনের ব্যাপারে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এখনও আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি।
এদিকে সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ ইউনিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে আরও দুই বছর আগে। কিন্তু ছাত্রলীগের এসব ইউনিটের সম্মেলনের বিষয়েও কোন প্রস্তুতি নেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। এমনকি এসব কমিটির সম্মেলনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর বিভাগ থেকেও কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতি হন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী। দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের কারণে পরের বছরর ২০১৯ সালর ১৪ সেপ্টেম্বর পদচ্যুত হন তারা। তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
২০২০ সালর ৪ জানুয়ারি তারা পূর্ণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের দুই বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে।