ঢাবিতে ছাত্রদলের ওপর হামলাকারী সবাই ছাত্রলীগের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ওই হামলায় ছাত্রলীগ জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত-প্রচারিত বিভিন্ন ছবি-ভিডিও বিশ্লেষণে হামলায় সংগঠনটির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে।
গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবি-ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এএফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুন সামনে থেকে ছাত্রদলের ওপর হামলা করেন। এ সময় মুনের গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী এস এম আসিফ হোসেন, আরিফুল ইসলাম আলিফ ও রাকিবুল ইসলাম সাদিক হামলা অংশ নেন।
অন্যদিকে রিয়াজুল ইসলাম গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী জামান সামি, ওবায়দুল হোসাইন, মুহিব্বুল্লাহ লিওন, আব্দুল মুয়ামি হুযাইফা এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সহসম্পাদক এল রেহমান মিলে বেধড়ক পেটান।
হামলার সময় রিয়াজুল ইসলামকে স্টাম্প এবং মুনেম শাহরিয়ার মুনকে কাঠ দিয়ে মারতে দেখা যায়। জানা যায়, রিয়াজুল ইসলাম কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী এবং মুনেম শাহরিয়ার ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।
আরও পড়ুন: ‘ঢাবি ভিসি ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন’
গত মঙ্গলবার বিকাল ৪টার কিছু পরে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নীলক্ষেত মোড়ে জড়ো হন ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে স্যার এএফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুনের নেতৃত্বে হল ছাত্রলীগের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী পাইপ, স্টাম্প ও লাঠি নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে।
এ হামলায় ছাত্রদলের প্রায় দশজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতরা হলেন- ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন শাওন, রাজু আহমেদ, ফারহান, আরিফ, শামিম আক্তার শুভ, নাজমুস সাকিব, মুন্সী সোহাগ এবং মুহসিন হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নয়ন।
আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ আশেপাশের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা করে। এতে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারা ঢাকা মেডিকেল ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ হামলার বিষয়ে এএফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমরা ছাত্রদলের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের আমরা প্রতিহত করব। তারা আমাদের এক কর্মীকে আহত করার পর আমরা তাদের প্রতিহত করতে গেছি।
জানতে চাইলে এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুন বলেন, এদিন আমাদের উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ছিল। স্মারকলিপি দিয়ে আমরা সেখান থেকে হলের দিকে আসছিলাম। এ সময় অন্যপাশে থাকা আমাদের এক কর্মীকে তারা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ কারণে তাদের সাথে আমাদের কয়েকজন কর্মীর ঝামেলা হয়েছে।
হামলার ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শুনেছি সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলে তাদের গণধোলাই দিয়েছে। এতে ছাত্রলীগের দায় কেন হবে? আমাদের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কোনো কাজ করে না। এ হামলায়ও ছাত্রলীগের কেউ জড়িত ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অতিথি হিসেবে মনে করি না। আমরা তাদের অভিভাবক হিসেবে আমাদের সন্তানের মতো দেখাশোনা করি। সব ছাত্রসংগঠনগুলো আমাদের কাছে সমান। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি মূল্যবোধ গড়ে উঠুক আমরা চাই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে সেই শিক্ষা দেই।