ইডেনের সুন্দরীদের ছবি তুলে খারাপ প্রস্তাব দেয়, বিস্ফোরক ছাত্রলীগ নেত্রী

ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী
ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী  © সংগৃহীত

গণমাধ্যমে কথা বলায় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসের ওপর চড়াও হয়েছেন সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা। এতে মধ্যরাতে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়।  

জান্নাতুল ফেরদৌসকে মারধর করে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা রাজিয়া। রাত দেড়টার দিকে নির্যাতনের শিকার সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, সিট বাণিজ্য নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাকে কক্ষে আটকে মারধর করা হয়েছে।

তার আপত্তিকর ছবিও তুলে রেখেছেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও তাদের সমর্থকরা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে তিনি আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দেন। নেত্রীরা ছাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজ করানোর প্রস্তাব দেয় বলে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। একাধিক বেসরকারি টেলিভিশনে এ নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখীকে বলতে দেখা যায়, ‘সাড়ে ১০টার দিকে জান্নাতুল ফেরদৌস ক্যাম্পাসে ঢুকছিলেন। তখন আয়শা সিদ্দিকা হলের সামনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ১০-১৫ জন অনুসারী হামলা চালান। সবার ফোন কেড়ে নেয়া হয়। পরে সেগুলো বকুলতলায় বসে থাকা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেন।

বৈশাখী বলেন, আগেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। রুমের মেয়েদেরকে তারা নিয়ে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু মেয়েরা নিরাপদ মনে করেন না। কারণ তারা মেয়েদেরকে দিয়ে ব্যবসা করাতে চান। বৈধ রুমের মেয়েরা খাতায় স্বাক্ষর করার সময় সভাপতির অনুসারীরা ছবি তুলে রাখেন। সেখান থেকে কোন মেয়েটা সুন্দর নির্বাচন করে রাখা হয়। সেই মেয়েদেরকে রুমে নিয়ে হুমকি দেয়া হয়। খারাপ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দেয়। কিছু দিন আগে একজন মেয়ে এ বিষয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।

আরো পড়ুন: আত্মহত্যার হুমকি দিলেন ইডেন ছাত্রলীগ নেত্রী জান্নাতুল

ছাত্রলীগের এই নেত্রী বলেন, প্রশাসন, শিক্ষক, হল প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সব কিছুই জানেন। কিন্তু তারা জব্দ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে। এর আগে রিভার অডিও ফাঁস হয়েছে। সেখানে অধ্যক্ষ ম্যাডামকে নিয়ে তিনি বলেছেন তার নাকি কোনো ক্ষমতা নেই। সব ক্ষমতা সভাপতি রিভার কাছে আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাহায্য না করে সিট বাণিজ্য, মেয়ে বাণিজ্যসহ অপকর্ম করি, তবে ইডেন কলেজেরও বদনাম হবে।

আরেক সহ-সভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈ বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে বারবার জানানোর পরও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একচ্ছত্রভাবে ক্যাম্পাসে অন্যায়-অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন। এ ব্যাপারে কলেজ প্রশাসনও নীরব।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাকে কলেজে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রীনিবাসের হল সুপার নাজমুন নাহার বলেন, এখনই কোনো ব্যবস্থার কথা আমরা বলতে পারব না। সকালে বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে উভয় পক্ষের বক্তব্য নিয়ে পরবর্তীতে কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।