যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের টাকায় থাকলেন-খেলেন তদন্তে আসা ছাত্রলীগ নেতারা

তদন্তকারী তিন ছাত্রলীগ নেতা
তদন্তকারী তিন ছাত্রলীগ নেতা   © সংগৃহীত

সম্প্রতী রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানা ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমির বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ তদন্ত করতে রাজশাহী আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কিন নেতা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এই তিন নেতা ঢাকা-রাজশাহী যাওয়া-আসা করেছেন উড়োজাহাজে। রাজশাহী শহরে ঘুরেছেন দামি প্রাইভেটকারে। পর্যটন মোটেলে ভিআইপি কক্ষে থেকেছেন, খেয়েছেনও। এত সবকিছু করেছেন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁদের টাকাতেই। 

তদন্ত করতে আসেন কেন্দ্রীয় কমিটির গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক শেখ শামীম তূর্য, উপ-আইন সম্পাদক আপন দাস এবং সহ-সম্পাদক তানভীর আব্দুল্লাহ। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে তাঁরা বিমানে চড়ে রাজশাহী আসেন। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তাঁরা আবার উড়োজাহাজে করেই ঢাকায় ফেরেন। তিনজন ছিলেন রাজশাহী পর্যটন মোটেলে। তিনজনের জন্য তিনটি ‘ভিআইপি স্যুইট’ বুক করা হয়েছিল। 

পর্যটন মোটেল সূত্রে জানা গেছে, ভিআইপি স্যুইটে থাকা-খাওয়া বাবদ সব মিলিয়ে পর্যটন মোটেলের বিল এসেছে ৩২ হাজার ৪০০ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ২৮ টাকা ছাড় দিয়ে বিল করা হয়েছে ৩১ হাজার ৩৭২ টাকা। মঙ্গলবার বিকেলে মোটেল থেকে বের হওয়ার সময় কেন্দ্রীয় নেতারা এই বিল পরিশোধ করেননি। 

আরও পড়ুন: জাবিতে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় দুই বহিরাগত শিক্ষার্থী আটক

সবাই চলে যাওয়ার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী মাসুক হেলাল পর্যটন মোটেলের কাউন্টারে গিয়ে কত টাকা বিল তা জেনে আসেন। 

এ বিষয়ে মাসুক হেলাল বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক জাকির হোসেন অমিও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্র। তিনিও পড়েন এই মেডিকেল কলেজে। তিনি বিল জেনে গেলেন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিল পরিশোধ করবেন।’ সোমবার কেন্দ্রীয় নেতারা আসার আগে মাসুক হেলালই রুম বুকিং করেছিলেন বলে জানান।

কেন্দ্রীয় নেতারা যখন দলের অন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন অভিযুক্ত দুই নেতা সাকিবুল ইসলাম রানা এবং জাকির হোসেন অমিও উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘এসব তদন্ত টদন্ত কিছু না। সবই লোক দেখানো।’ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের টাকায় থেকে-খেয়ে কী তদন্ত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই ছাত্রলীগ নেতা। 

তদন্তে কী পাওয়া গেছে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক তানভীর আব্দুল্লাহ বলেন, ‘তদন্তে কী পাওয়া গেছে তা পরে জানানো হবে।’ একদিনেই কীভাবে তদন্ত শেষ হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা রাত ৩টা পর্যন্ত তদন্ত করেছি। সবার সঙ্গে কথা বলেছি। খাওয়া-দাওয়ারও সময় পাইনি।’ 

পর্যটন মোটেলে থাকা-খাওয়া বাবদ ৩১ হাজার ৩৭২ টাকা বিল পরিশোধ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি বলছিল, ভাই বিল আমরা দিতেছি। আমরা দিতে চেয়েছি, কিন্তু ওরা বলেছে, ভাই কোনোভাবেই এটা সম্ভব না। এখনো বিল দেয়নি, আমি দেখছি।’ 

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁদের খরচেই থাকা-খাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে তানভীর আব্দুল্লাহ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যেখানে যায় খরচ স্থানীয় নেতারাই করে। তারা না করলে আমরা করছি।’ 

তদন্ত কমিটির সদস্যদের থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করা নিয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমি বলেন, ‘তাঁরা আমাদের অতিথি। আমরা এখনো ছাত্রলীগের কমিটিতে আছি। আমাদের কমিটির কার্যক্রম স্থগিত নেই। কেন্দ্রের নেতারা এলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আমরাই করে থাকি। এবারই তাই করেছি।’ 

জাকির জানান, তাঁর এবং সভাপতি সাকিবুলের বিরুদ্ধে যে ‘মিথ্যা’ অভিযোগ তোলা হচ্ছে সেগুলোর প্রমাণ তাঁরা তদন্ত কমিটিকে দিয়েছেন। লিখিত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি আশা করছেন, তাঁরা যে ষড়যন্ত্রের শিকার সেটা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে।

রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানা ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমির বিরুদ্ধে সম্প্রতি নানা অভিযোগ সামনে এসেছে। মোবাইল ফোনে গোপনে ধারণ করা সাধারণ সম্পাদকের ‘ফেনসিডিল সেবনের’ ভিডিওচিত্র ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হয়েছে দলীয় নারী কর্মীর সঙ্গে সভাপতি সাকিবুল ইসলামের ফোনালাপের একটি অডিও। সেখানে টাকা ও পদের লোভ দেখিয়ে নারী কর্মীর সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। 

এ ছাড়া এই দুই নেতার বিরুদ্ধে আরও নানা অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের নেতা থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি হয়েছেন সাকিবুল। এসব অভিযোগই তদন্ত করতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এই তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়। সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ