ছাত্রাবাসে এসি লাগিয়ে থাকেন ছাত্রলীগ নেতা
রাজশাহী মেডিকেলের ছাত্র ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। কলেজের শহীদ কাজী নূরুন্নবী ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত করে থাকেন সেখানে। সরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসের কক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এসি লাগানোর সুযোগ না থাকলেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তিনি লাগিয়েছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ২২৮ নম্বর কক্ষে এসি লাগালেও এতদিন সেটা কারও নজরে আসেনি। সম্প্রতি বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তাকে নোটিশ দেওয়া হয়।
তবে জাকির হোসেন দাবি করেন, এসি লাগানো কক্ষটি ছাত্রলীগের ‘এজমালি’। এই কক্ষে সংগঠনের সভা হয়। নেতাদের অনেকে এসে বসেন।
আরও পড়ুন: ছিলেন সামনের সারিতে, গ্রুপিংয়ের শিকার হয়ে ‘মাইনাস’ তারা
জাকির হোসেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ২৭তম বিডিএস কোর্সের শিক্ষার্থী। তার শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে পাস করে কলেজ থেকে বেরিয়ে গেলেও তিনি এখনও বের হতে পারেননি। পরীক্ষা না দেওয়ার কারণে তিনি পিছিয়ে পড়েছেন। এবার তিনি ‘থার্ড প্রফ’ (চূড়ান্ত বর্ষের আগের বর্ষ) দিচ্ছেন। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শহীদ কাজী নূরুন্নবী ছাত্রাবাসের আবাসিক ছাত্র। তার নামে ছাত্রাবাসের ৩২৭ নম্বর কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এখন ২২৮ নম্বর কক্ষে থাকেন। ওই কক্ষে এসি লাগানো রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে ওই ছাত্রাবাসে গিয়ে একাধিক কর্মচারীর কাছে জানতে চাইলে এক বাক্যে সবাই বলেন, এসি লাগানো ২২৮ নম্বর কক্ষে জাকির হোসেন থাকেন। ওই সময় কক্ষটিতে তালা দেওয়া ছিল। তবে অন্যান্য শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে তারাও নিশ্চিত করেন, এসি লাগানো কক্ষেই জাকির থাকেন। আর জাকিরের নামে বরাদ্দ করা ৩২৭ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে তার ছবি সংবলিত একটি পোস্টার লাগানো রয়েছে। কক্ষের দরজা খোলা, ভেতরে কাউকে পাওয়া যায়নি। কক্ষে এক সেট সোফা পাতা রয়েছে। তৃতীয় তলার ওই ব্লকের শিক্ষার্থীরাও নিশ্চিত করেন, জাকির এখন এসি লাগানো দ্বিতীয় তলার ওই কক্ষটিতে থাকেন।
শহীদ কাজী নূরুন্নবী ছাত্রাবাসের ৩২৭ নম্বর কক্ষে বহিরাগত ব্যক্তিদের নিয়ে অবস্থান করার অভিযোগে ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক গত বছর জাকিরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে ওই কক্ষে বহিরাগত ব্যক্তিদের নিয়ে মাদক সেবনের অভিযোগও রয়েছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী বলেন, ‘জাকির রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এখনো তিনি বের হতে পারেননি। ইতিমধ্যে তিনি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। তাঁর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে তাঁরা অস্বস্তিতে আছেন। অধ্যক্ষ বলেন, জাকির হোসেনের কক্ষে এসি ব্যবহারের বিষয়ে তাঁকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরকে ওই কক্ষের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়েছে।’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘যে কক্ষেই এসি থাকুক, সেটি অবশ্যই জাকির হোসেনের। তিনি সেই কক্ষেই থাকেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। বহিরাগত ব্যক্তিদের নিয়ে থাকার অভিযোগে ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক তাঁকে নোটিশ দিয়েছেন।’
তবে ছাত্রাবাসে এসি লাগানো কক্ষে থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে জাকির দাবি করেন, ‘তার নামে ৩২৭ নম্বর কক্ষ বরাদ্দ। সেখানে এসি নেই। ২২৮ নম্বর কক্ষ ছাত্রলীগের একটা ‘এজমালি’ কক্ষ। সেখানে সংগঠনের মিটিং করা হয়। সবাই এসে বসেন। সেখানে মাঝেমধ্যে থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।’
এছাড়াও চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে একজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তাঁর ‘মাদক’ সেবনের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।