এক পায়ে লাফিয়ে চলা সুমাইয়ার দায়িত্ব নিলেন ইকবালুর রহিম
পড়ালেখার অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে এক পায়ে লাফিয়েই স্কুলে যাওয়া-আসা করে সুমাইয়া। বাসা থেকে তার স্কুলের দূরত্ব দুই কিলোমিটার পথ। কালক্রমে এক পায়ে হাঁটার অভ্যাসও গড়ে নেন। সুমাইয়ার এক পায়ে লাফিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসার নিউজ বিভিন্ন মিডিয়ায় এলে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি।
ইকবালুর রহিম বলেন, ‘লেখাপড়ার প্রতি কী পরিমাণ আগ্রহ থাকলে মাত্র ১০ বছর বয়সী একজন মেয়েে এক পায়ে ভর করে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারে সুমাইয়াকে দেখে বোঝা যায়। তার কষ্টের বিষয়গুলো জানতে পেরে আমি একটি স্বয়ংক্রিয় হুইল চেয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। সেটা সে নিজেই পরিচালনা করে নিয়মিত স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারবে। একইসঙ্গে তার পায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবো।
তিনি আরও বলেন, আমি গত ১৩ বছর ধরে সংসদ থেকে প্রাপ্ত ভাতার সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করি গরিব-মেধাবীদের পড়ালেখায়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে সম্মানীর সেই অর্থে। আমরা ৫ ভাইবোন প্রতি বছরই পড়ালেখার জন্য ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করি। অভাবের কারণে বা অর্থের অভাবে যাতে করে কোনো শিক্ষার্থী ঝড়ে না পড়ে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কে জানে হয়তো এদেরই মধ্যে এমন কেউ আছে যারা আগামী দিনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে।
আরও পড়ুন: শিক্ষক হচ্ছেন ঢাবির সেই সন্তোষ
রিকশাচালক বাবার সঙ্গে মাস দেড়েক আগেও হাসপাতালে গিয়েছিলেন সুমাইয়া। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা জানান, ‘সুমাইয়ার পায়ে অস্ত্রোপাচার করলে পা ঠিক হয়ে যাবে। এ জন্য তিন লাখ টাকার মতো প্রয়োজন হবে। এ শুনে তার বাবা বাড়ি চলে আসেন।’
সুমাইয়ার বাবা শফিকুল জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় রিকশা চালাই। আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। বাড়িতে থাকলে আমার মেয়েকে কোলে করে স্কুলে আনা-নেওয়া করতাম। এমনিতেই অভাবের সংসার। তাই আয়-রোজগারের জন্য বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। মেয়ের এভাবে স্কুলে যাওয়া-আসার কষ্ট দেখে বাবা হিসেবে সইতে পারি না।’
সুমাইয়ার মা সুমি আক্তার জানান, ‘সুমাইয়ার দুই বছর বয়সে গুটিবসন্ত হয়েছিল। এরপর একদিন দেখি বাঁ পা বাঁকা হয়ে আছে। লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যায়, এ দৃশ্য আমি মা হয়ে আর সহ্য করতে পারি না। দু’চোখের পানি আটকাতে পারি না। শুধু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা সবার মতো স্বাভাবিক দুই পা দিয়ে হেঁটে চলাফেরা করতে পারে।’
বর্তমানে সে উত্তর আলোকডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিন পিঠে ব্যাগ আর হাতে বই নিয়ে এক পায়ে ভর করে নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে হাজির হয়। সুমাইয়া বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায়। সুমাইয়া বলে, প্রতিদিন এক পায়ে ভর করে স্কুলে যেতে অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু আমি পড়াশোনা করতে চাই। বড় হয়ে চিকিৎসক হবো। যেন আমার মতো কেউ চিকিৎসার অভাবে কষ্ট না পায়।
উত্তর আলোকডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামনুর রশিদ বলেন, ‘পড়ালেখায় সুমাইয়া খুবই ভালো। কোনোদিন স্কুল ফাঁকি দেয় না। কষ্ট করে স্কুলে আসে। আমরা চাই সে সুস্থ হোক। মানুষের মতো মানুষ হোক।