মেডিকেলে চান্স পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত ইকতারের
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন মো. ইকতার আলী। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে যাচ্ছে। অর্থাভাবে মেডিকেলে ভর্তি হতে পারা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ইকতারের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার মমিনপুর উপজেলার নীলমনিগঞ্জ ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামে। হাশেম আলী ও মুসলিমা খাতুন দম্পতির সন্তান ইকতার। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। তার পরিবারের সকলেই দিনমজুর। নুন আনতে পান্তা ফুরোনো অবস্থা তাদের। সংসারের হাল ধরতে ৬০ বছর বয়সে ইকতারের বাবা রাজধানীর আদাবরের একটি বাসায় মাত্র ৮ হাজার টাকা বেতনে কেয়ারটেকারের চাকরি করেন। আর তার মা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন। সংসারে অভাব লেগে থাকলেও দমে যাননি ইকতার। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার সবগুলোতেই পেয়েছেন জিপিএ-৫।
নিজের সাফল্যের গল্প বলতে গিয়ে ইকতার জানান, পিইসি পরীক্ষার সময় মূল বইয়ের বাহিরে কোন সহায়ক বই ছিল না। অন্যের বই ধার নিয়ে পিইসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি। মূল পরীক্ষার এক মাস আগে দরিদ্রতার কারণে আমাদের তিন বেলা খাবার জোগাড় হচ্ছিল না। গ্রামের কিছু মহৎ ব্যক্তির সহায়তায় সে যাত্রায় পার পেয়েছি। আমাদের বিদ্যালয় থেকে সেবার প্রথমবারের মতো কেউ জিপিএ-৫ পায়। সেটি ছিলাম আমি। জেএসসি পরীক্ষার সময় আমাদের এক শিক্ষিকার সহায়তায় পড়ালেখা করেছি। জেএসসি গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিলাম।
আরও পড়ুন: ডেন্টালে প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বে ১২১ জন
জেএসসি পরীক্ষার পর মাধ্যমিকে ভর্তি করানোর মতো সামর্থ্য আমার পরিবারের ছিল না। আবারও মাধ্যমিক স্কুলের একজন শিক্ষিকার সহায়তায় এ বাধাও অতিক্রম করে ফেললাম। জেএসসি পরীক্ষার পর থেকেই চিকিৎসক হওয়ার তীব্র ইচ্ছা থেকেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়া। অর্থ সংকট থাকায় প্রাইভেট পড়ার সুযোগ হয়নি। নিজেই পড়ালেখা করেছি। আল্লাহর রহমতে এসএসসিতেও ভালো ফল করেছি। নিজের প্রবল ইচ্ছা থেকে মানুষের কাছে টাকা ধার করে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে ভর্তি হই। কলেজের মেসে থাকার ব্যবস্থা করে দেন আমার সেই শিক্ষিকা। পরিশ্রমের মাধ্যমে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছি।
ইকতার বলেন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেও আমার সুযোগ হয়েছিল। তবে সেবার সবগুলো মেডিকেল পছন্দক্রমে না দেওয়ায় ভর্তি হতে পারিনি। দ্বিতীয়বার ভর্তি প্রস্তুতি নিতে কোচিং সেন্টারে ভর্তির টাকাও ছিল না। বাবা-মা সাত হাজার টাকা ধার করে আমাকে মেডিকেল কোচিংয়ে ভর্তি করে দেয়। বাবা-মার ধার করা সেই টাকা বৃথা যায়নি। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে ২৭৮৬তম হয়েছি।
আরও পড়ুন: উদ্যোক্ত হওয়ার স্বপ্নে ৪ শিক্ষার্থীর ‘ফুডপল্লী’, স্বল্পমূল্যে দিতে চান নির্ভেজাল পণ্য
এত ভালো ফল করেও মেডিকেলে ভর্তি হব কীভাবে সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আমার এবং আমার বাবা-মার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ঈদের পর মেডিকেলে ভর্তি শুরু হবে। অথচ ভর্তি হওয়ার মতো কোনো টাকাই আমাদের কাছে নেই। মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর সেখানে থাকা-খাওয়ারা কি হবে সেটিও বুঝতে পারছি না।
ইকতিয়ারের মা মুসলিমা খাতুন জানান, আমার ছোট ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় খুব ভালো। নিজেরা না খেয়ে থেকেছি। তবুও ওর পড়ালেখা বন্ধ করিনি। ছেলে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় আমাদের খুশির শেষ ছিল না। তবে এখন ভর্তি করাবো কীভাবে সেই চিন্তায় আমাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। সমাজের কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমাদের একটি সহযোগিতা করত তাহলে আমার ছেলের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হত।
ইকতারকে সহযোগিতা করতে
ইকতার: 01909458604
ইকতারের বাবা হাশেম আলী: 01753934337